Friday, April 26, 2024
HomeEducationপড়াশোনা হবে এলিট শ্রেণির জন্য

পড়াশোনা হবে এলিট শ্রেণির জন্য

একটা সময় আসবে যখন ‘পড়াশোনা’ কাজটা হবে এলিট সোসাইটির জন্য। খাওয়াদাওয়া, ঘুরাঘুরি, এন্টারটেইনমেন্ট শেষে কিছু স্পেয়ার সময় পাওয়া যাবে, সেই সময় হয়তো কালে ভদ্রে কারো মনে হবে, ‘যাই, একটু পড়ালেখা করে আসি।কতদিন বইয়ের মুখ দেখি না!’

মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের জন্য পড়ালেখা তখন হবে বিলাসিতা। পকেটে খাওয়ার পয়সা নাই, অথচ প্রাইভেট টিউটর রাখতে চায়! খালি কলসী বেশি বাজলে যা হয়। তখন যে নিম্নবিত্তদের বড় হওয়ার স্বপ্ন কিংবা চেষ্টা শেষ হয়ে যাবে—সেটা না। তবে ধনী আর গরীবের পার্থক্য এতোই বেশি হবে যে গরীবদের এজুকেশন এফোর্ড করা মোটামুটি অসম্ভব হবে।

এই যুগটা রিসোর্সের যুগ। যার যতো রিসোর্স, তার ততো অপরচুনিটি। আর যেখানে অপরচুনিটি আছে, সেখানে অপরচুনিটি কস্ট ও আছে। ডিভাইস না থাকলে একশো জিবি নেট দিয়ে যেমন কাজ নেই, রিসোর্স না থাকলে অপরচুনিটি দিয়েও লাভ নেই।

.

আজকে বিকাল থেকে ‘The crow & The pitcher’ গল্পটা মনে পড়ছে। ভীষণ গরমে এক কাক তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি খুঁজতে থাকে। এক কলসীর তলানিতে কিছু পানি দেখে, কিন্তু কাকের মুখ তো ভিতরে ঢুকবে না। খোঁজাখুঁজি করে সে আশেপাশে কিছু নুড়িপাথর পায়। সেগুলো কলসীতে একের পর এক ফেলার পর পানি উপরে উঠে আসে। তারপর খুশিমনে কাক পানি খেয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

ধরা যাক, কাকটা হচ্ছে গরীব ছাত্র, কলসীর তলায় পানিটা হচ্ছে পড়ালেখা৷ নুড়িপাথর হতে হবে একটা মাধ্যম। মাধ্যম হবার ভালো উপায় টাকা, যেহেতু ছাত্রটি দরিদ্র, টাকার কথা এখানে অপ্রাসঙ্গিক।

নুড়িপাথর যদি সরকার প্রদত্ত কো-অপারেশন’কে ধরা হয়,তখন হয়তো পড়ালেখা দরিদ্র ছাত্রের মুখের কাছে আসতে পারবে। সরকার কিংবা এজুকেশন মিনিস্ট্রির হাত ছাড়া শুধু মেধা দিয়ে কোনোভাবেই পড়ালেখার কাছাকাছি যাওয়া যাবেনা।

আমাদের দেশের এজুকেশন মিনিস্ট্রি কিংবা সরকার ( I really don’t know who should I point to) নুড়িপাথরের চেয়ে অনেক বেশিকিছু। সম্ভবত তারা প্লাটিনাম, রোডিয়াম, কিংবা ডায়মন্ড টাইপের কিছু হতে পারে। তাদের কো-অপেরশন কিংবা বিচক্ষণতার একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে একটা ব্যাচের এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিলো। তখনো বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের হার এতো বেশি না। চাইলে হয়তো ছোট পরিসরে পরীক্ষা নেওয়া যেতো। সবগুলো পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলেও, অন্তত ৫ টা, ৪ টা, কিংবা ৩ টা পরীক্ষা নেওয়া যেতো। ৩ টা পরীক্ষা নিলেও অন্তত অটোপাশের মতো স্টুপিড ডিসিশন দেখতে হতো না।

এরপর মে,জুন, জুলাই গেলো।

এই সময়গুলোতে বেশিরভাগ এইচএসসি ক্যান্ডিডেটরা এডমিশন কোচিং করেছে। কারণ এমন একটা পরিস্থিতি ছিলো এইচএসসি পরীক্ষার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এডমিশন টেস্ট হয়ে যাবে। কি ভীষণ সেই তোড়জোড়! ২৮ আগস্ট জানানো হয়, এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সুযোগ নেই।

আবার সেপ্টেম্বরে জানানো হয় নভেম্বর মাসে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এর কিছুদিন পরই জানানো হয় পরীক্ষা হবে না, অটোপাশ দিয়ে দিবে। অবশেষে ৩০ জানুয়ারি, ২০২১ সালে অটোপাশ ফলাফল ঘোষণার মাধ্যমে ‘এইচএসসি ২০২০’ নাটক শেষ হয়।

এই পর্যন্ত হয়ে থেমে গেলে ২০ ব্যাচের স্টুডেন্টরা সম্ভবত একটু আরাম পেতো৷ কিন্তু এখনো বড়সড় নাটক দেখানো বাকি আছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো প্রায় ১৪ লাখ। এদের মধ্যে সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে চার হাজারের মতো। বাকিরা ভর্তি হয়েছে বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়/মেডিকেল কলেজ, IUT, কিংবা MIST তে। ১৪ লাখের মধ্যে যদি ৫০ হাজারও এই ইন্সটিটিউটগুলোতে ভর্তি হয়, বাকি থাকে তেরো -সাড়ে তেরো লাখ। বর্তমানে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবির অভাব নেই, কিন্তু এদের কথা কি কেউ চিন্তা করছে? কেউ কেনো এদের দুরাবস্থার কথা উর্ধ্বমহলে পৌঁছে দিচ্ছে না যেখানে তাঁরা এয়ার কন্ডিশনারের নিচে বসে বসে ঘর্মাক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়?

প্রাইভেট কিংবা সেমি-প্রাইভেট এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ার জন্য মেধার পাশাপাশি প্রচুর টাকারও দরকার হয়। এই টাকা মধ্যবিত্তরা জমি বন্ধক রেখে,বা টেনেটুনে এফোর্ড করতে পারলেও নিম্নমধ্যবিত্ত তুখোড় ছাত্রের জন্য অসম্ভব। এরা হাঁ করে বসে আছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য।

.

এডমিশন টাইমে ইউজুয়ালি তিন মাসেই স্টুডেন্টরা বিদ্ধস্ত হয়ে যায়, শ্রান্ত হয়ে ধপ করে বসে পড়ে। আর এই ব্যাচটা ২০১৮ সাল থেকে একই বই পড়ছে। অনিশ্চিত ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। শেষমেষ ৬ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ডেট দিলেও আজ সেটা ১ অক্টোবর করা হয়েছে, নিশ্চয়ই এখানেই শেষ নয়। সময় এখন রাবারের মতো, বাড়তেই থাকবে।

একই সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য হাঁ করে বসে থাকা ছাত্রদের বন্ধুরা অনলাইন ক্লাস করছে, অনেকে টিউশন করছে। কারো কারো সাথে রাস্তায় দেখা হয়ে গেলে এরা মুখ লুকায়, পালাতে চায়। বই খুলে এরা চোখের পানি ফেলে, পড়া হয় না। এক বছর আগে কি পড়েছে আবছা আবছা মনে ভাসে। সময়গুলো কতটুকু ডিপ্রেসিভ হতে পারে কাছ থেকে না দেখলে বোঝা কঠিন।

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মতো করে কি নিজ নিজ জেলায় এই পরীক্ষাগুলো নেওয়া যেতো না? মেডিকেল কলেজগুলার প্রফ পরীক্ষাগুলো কি হয়নি? শাটডাউনের আগে মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, ট্যুরিস্ট প্লেসগুলোতে কি মানুষ যায়নি? শাটডাউন তুলে দেবার পর কি যাবেনা? তাহলে কিসের এক্সকিউজ দিয়ে বারবার ভর্তি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়? এই শাটডাউন শেষ হওয়ার পর করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এই বছরটাও নিশ্চয়ই এভাবে কাটবে?

ইতালিয়ান পাসপোর্টধারী ঠিকই বলেছেন। আই পাক ইউর সিস্টেম, বাংলাদেশ।

-জারিন তাসনিম

Related News
- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!