ধরে নিলাম, পরীমনি খারাপ। অতিরিক্ত খারাপ। কিন্তু খারাপ মানুষেরও কি নির্যাতনের বিচার পাওয়ার অধিকার নেই? বিচার চাওয়ার স্বাধীনতা নেই? উনি তো সরকারের কাছে বিচার চেয়েছেন। নিজের নিরাপত্তার জন্য আইনের আশ্রয় চেয়েছেন। তাহলে আমরা কেন তার বিচার চাওয়াকে সহ্য করতে পারছি না? কোন দৃষ্টিকোণ থেকে ট্রল করছি?
আজকে পরীমনির বিচার চাওয়াটাকে যদি হাস্যরসের তালে উড়িয়ে দিই, তাহলে অন্যদিন আমার বোনের নির্যাতনের খবরে আরেক দল হাসবে না-তার গ্যারান্টি কোথায়?
আমাদের মধ্যে চরম একটা পক্ষপাতমূলক আচরণ লক্ষ্যণীয়। আর তা-হলো আমরা নির্ভেজাল একটা ধারণা পোষণ করি। সেই বিশুদ্ধ ধারণাটি হলো- আমরা মনে করি, যারা আমাদের মানসিকতার কিংবা আমাদের মতের পক্ষের লোক তারাই কেবল সাধু; বাকিরা শয়তান। শয়তান মরলেও আলহামদুলিল্লাহ আর নির্যাতনের শিকার হলেও আলহামদুলিল্লাহ।
আমি আর আপনি যে সাধু তার চ্যালেঞ্জ কী? যে দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সাধুগিরির ভাব নিই, তার প্রমাণ আছে? তরুণ লেখক আখতারুজ্জামান আজাদের এক লেখায় তিনি দারুণ একটা কথা বলেছেন। সাধু বিষয়ক একটি কথা। তিনি বলেন-
“কেলেঙ্কারি ফাঁস না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রত্যেকেই সাধু। কেবল পিছমোড়া দিয়ে বাঁধার পরই চোরকে চোর মনে হয়।”
অনেকে পরীমনির অর্ধ আবরণের ছবির গাট্টিসুদ্ধা খুঁজে বের করে নিজের টাইমলাইনে প্রচার করে সংগ্রামী প্রতিবাদীর তালিকায় নাম উঠিয়ে নিজের কৃতিত্বের ভার ভারি করে চলছে। অন্যজনের দোষ প্রচার করে কিংবা অন্যজনকে নাস্তিক মুরতাদ ট্যাগ লাগিয়ে আমরা নিজের ধার্মিকতা প্রকাশ করি। অন্যজন শয়তান প্রমাণ করেই নিজেকে সাধু সন্ন্যাসীর পর্যায়ে নিয়ে দাঁড় করাই।
পরীমনি অর্ধনগ্ন হলে তাকে এড়িয়ে চলবেন জানি, কিন্তু তার অর্ধনগ্ন ছবির সন্ধানে কেন যাবেন? এমনটা যদি করেন তাহলে কি পরী মণির এমন বেহায়াপনাকে আপনি প্রমোট করছেন না?
যারা পরীমনিকে ফলো করে না কিংবা চিনে না তাদেরও তার নগ্ন ছবি দেখার সুযোগ করে দিচ্ছেন না? যদি তাই করে থাকেন তাহলে আপনার ধার্মিকতা কোথায়?
পরীমনি হোক আর নুসরাত, তনু হোক ধর্ষণের বিচার চাই। মানুষের নিরাপত্তা চাই। নারী নির্যাতন বন্ধের দাবি জানাই।