Thursday, March 28, 2024
HomeBusinessটাকার ভবিষ্যৎ

টাকার ভবিষ্যৎ

কাগুজে মুদ্রার ভবিষ্যৎ আর খুব বেশিদিন আছে বলে মনে হয় না। আর বড়জোর ৩০ থেকে ৪০ বছর। এরপরে সম্পূর্ণ লেনদেন অদৃশ্য মুদ্রায় সম্পাদিত হবে। মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহারে আরেকটু আগালেই ‘অদৃশ্য মুদ্রা‘ র দিকে হাঁটবে ভবিষ্যৎ পৃথিবী। বর্তমানেও ২৫ থেকে ৩০% লেনদেন মোবাইল ব্যাংকিং আর ডেবিট (Debit) বা ক্রেডিট (credit) কার্ডে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এই লেনদেন আর পাঁচ থেকে দশ বছর পর ৫০ থেকে ৬০% পার হতে পারে। এবং ধীরে ধীরে কাগুজে মুদ্রা বিলুপ্ত হতে থাকবে।

একদিন মানুষ কল্পনাই করতে পারতো না যে সামান্য কিছু কাগজ দিয়ে মানুষ পণ্য আদান প্রদান করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।

কাগুজে মুদ্রা প্রচলনের কাহিনী চমকপ্রদ।  আগের দিনের ব্যবসায়ীরা কাফেলা ডাকাতির ভয় থেকে বাঁচতে স্বর্ণমুদ্রার দলিল হিসাবে কাগজে লিখিত এক ধরনের চুক্তিপত্র প্রচলন করে। ধীরে ধীরে এই চুক্তিপত্রের ব্যবহার এতই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে, তা মুদ্রায় পরিণত হতে থাকে। আধুনিক যুগে এসেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যখন মুদ্রা ছাপানো শুরু করে তখন যে পরিমাণ মুদ্রা ছাপাতো ঐ পরিমাণ স্বর্ণ কেন্দ্রীয় ট্রেজারীতে রিজার্ভ রাখতে হতো। এখন যেমন টাকার উপর লেখা থাকে ‘চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে একশত টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে'(মানে একশ টাকা পরিমাণের পণ্য বা সেবা দিতে বাধ্য থাকবে) তখন টাকার উপর লেখা থাকতো ‘চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে ‘এই’ পরিমাণ স্বর্ণ দিতে বাধ্য থাকিবে’। একসময় ব্যাংক স্বর্ণের পরিমাণের চেয়ে চার পাঁচ গুণ বেশি টাকা ছাপতে শুরু করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মুদ্রার চাহিদা বেড়ে যায়, তবে সমস্যা হলো স্বর্ণের মজুত তো আর বাড়েনি। এখন যখন নোট ইস্যু করার দরকার পড়ল, স্বর্ণের মজুত থাকতেই হবে। এ পরিস্থিতিতে অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশ আইন পরিবর্তন করে। তারা স্বর্ণের পাশাপাশি স্বর্ণে রূপান্তরযোগ্য অন্যান্য দেশের মুদ্রাও রিজার্ভ আকারে রাখার অনুমোদন দেয়। এ ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইস্যু করা নোটের মূল্য স্বর্ণে পরিশোধ করা বা স্বর্ণমুদ্রা ও স্বর্ণ জনসাধারণের কাছে ক্রয় বিক্রয়ের জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। তবে এ সব নোটের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গোল্ড এক্সচেঞ্জ বা বিল অব এক্সচেঞ্জ, ড্রাফট অথবা চেক ইস্যু করার দায়িত্ব গ্রহণ করত। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো সমঝোতা ছাড়া এই ব্যবস্থা চলতে থাকে।

কিন্তু সমস্যাটার শুরু হয় তখনই যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়াতে অনেক দেশ পর্যাপ্ত স্বর্ণ মজুত না রেখে নোট ছাপাতে শুরু করে।

১৯২৮ সালের দিকে ২৫টি দেশ তাদের নোটের বিপরীতে রিজার্ভের মাত্র ৪২ শতাংশ তথাকথিত গোল্ড এক্সচেঞ্জ বিশেষ করে পাউন্ডে রেখেছিল। তবে সে সময় বিশ্বব্যাপী মহামন্দা শুরু হলে গ্রেট ব্রিটেনেও তার ছোঁয়া লাগে এবং ব্রিটেন পাউন্ড স্টার্লিংয়ের বিপরীতে স্বর্ণ পরিশোধ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

এমন অবস্থায় ইউরোপের দেশসমূহে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তারা তাদের জমা রাখা পাউন্ড স্টার্লিং স্বর্ণে পরিবর্তন করে নিতে আগ্রহী হয়। তারা ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের কাছে পাউন্ডের বিপরীতে স্বর্ণ দাবি করে। তবে তাদের এই দাবি মেটানো ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

এ সব জটিলতায় ১৯৩১ সালে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড পরিত্যাগ করে গ্রেট ব্রিটেন।

বর্তমানে কাগজের টাকাগুলিকে স্বর্ণমুদ্রার মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা আর বিদ্যমান নেই। এর মূল্য কেবল সরকারী আদেশের মাধ্যমে বলবৎ আছে।

এখন যুগ আধুনিক থেকে আধুনিকতর হতে চলছে। সেই সাথে কাগুজে মুদ্রাও প্রায় বিলুপ্তির পথে হাঁটতে শুরু করছে।

 

আমার ধারণা, একসময় বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত স্মার্ট আইডি কার্ডের মাধ্যমেই সব আর্থিক লেনদেন সম্ভব হবে। ওইটাই ডেবিট (Debit credit) বা ক্রেডিট কার্ডের ভূমিকা নিতে পারে। সব লেনদেন সেটা দিয়েই ডিজিটালভাবে সম্পন্ন হবে।  সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ব্যাপারে ভেবে দেখতে পারে।

হামিদুল ইসলাম আরফাত 

শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Related News
- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!