Thursday, April 25, 2024
HomeAgriculturalফুলকপি চাষ পদ্ধতি । আধুনিক ফুলকপি চাষ ২০২১

ফুলকপি চাষ পদ্ধতি । আধুনিক ফুলকপি চাষ ২০২১

ফুলকপি চাষ পদ্ধতি অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনা মূলক সহজ। ফুলকপি শীতের প্রধান জনপ্রিয় সবজি। তরকারি, স্যুপ তৈরি করে, বড়া ভেজে ফুলকপি খাওয়া হয়। তবে শীতকালের সবজি হলেও ফুলকপি এখন গ্রীষ্মকালেও উৎপাদিত হচ্ছে।

আসুন জেনে নেওয়া যাক ফুলকপি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে –


ফুলকপি চাষ পদ্ধতি তে জলবায়ু ও মাটিঃ

ফুলকপি চাষের জন্য সুনিকাশযুক্ত উর্বর দোআঁশ ও এটেল মাটি সবচেয়ে ভালো। ফুলকপির জন্য ঠান্ডা ও আর্দ্র জলবায়ু ভালো। ফুলকপি চাষের জন্য ঠান্ডা ও আর্দ্র জলবায়ু ভালো। উঁচু জমি যেখানে পানি জমে না এবং সারা দিন রোদ পায় এমন জায়গা ফুলকপি চাষের জন্য উত্তম। ফুলকপি চাষের মাটিতে যত জৈব পদার্থ থাকবে ফলন ততই ভালো হবে।মাটির পিএইচ ৬.০-৬.৫ ফুলকপি চাষের জন্য উত্তম।

ফুলকপির জাতঃ

এদেশে এখন ফুলকপির পঞ্চাশটিরও বেশি জাত পাওয়া যাচ্ছে। শীতকালেই আগাম মধ্যম ও নাবী মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি আবাদ করা যায়। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে চাষের উপযোগী জাতও রয়েছে।

ফুলকপির বিভিন্ন জাত সমূহঃ

১.আগাম জাতঃ

অগ্রাহনী,আর্রলিপটানাই, আর্লিস্নোবল, সুপার স্নোবল, ট্রপিক্যাল স্নো-৫৫, সামার ডায়মন্ড এফ-১,স্নো কুইন এফ-১,হিট মাস্টার ও হাইব্রিড জাত। এসব জাতের বীজ শ্রাবন ও ভাদ্র মাসে বুনতে হয়।

২.মধ্যম আগাম জাতঃ

পৌষালি, রাক্ষুসী, স্নোবল এক্স, স্নোবল ওয়াই, হোয়াইট টপ, স্নো ওয়েভ, বিগটপ, বিগশট, মোনালিসা এফ-১,চন্দ্রিমা ৬০ এফ-১ ইত্যাদি। ভাদ্র ও আশ্বিন মাস হলো এসব জাতের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।

নাবী জাতঃ

মাঘী বেনারসি, ইউনিক স্নোবল, হোয়াইট মাইন্টেন, ক্রিস্টমাস, এরফার্ট ও হাইব্রিড জাত। এসব জাতের বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হলো আশ্বিন – কার্তিক মাসে।

এ জাতগুলো ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বারি ফুলকপি-১ (রোপা) ও বারি বাঁধাকপি -২(অগ্রদূত) নামে মধ্যম আাগাম জাতের ফুলকপির দুইটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। বারি ফুলকপি-১ জাতের প্রতিটি ফুলকপির ওজন ৮৫০-১০০০ গ্রাম। ফুলকপি চারদিকে পাতা দিয়ে ঢাকা থাকে। এ দেশের জলবায়ুতে বারি ফুলকপি-১ জাতের বীজ উৎপাদন করা যায়।

বারি বাঁধাকপি -২ (অগ্রদূত) আকারে গোলাকার, উপর-নিচ চেপ্টা। পাতার পৃষ্ঠদেশে পাতলা মোমের আবরণের মতো বস্তু রয়েছে। প্রতিটি বাধাঁকপির ওজন ২.০-২.৫ কেজি। জাতটি বাংলাদেশের জলবায়ুতেই বীজ উৎপাদন করে।

বীজ বপন থেকে কপি উৎপাদন পর্যন্ত ১০০-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ফলন ৫৫-৫৬ টন এবং বীজের ফলন ৫৫০-৬৫০ কেজি পাওয়া যায়। এ জাত বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদের উপযোগী।

বীজের হারঃ

এক শতক জমিতে রোপনের জন্য ২-২.৫ গ্রাম বীজের চারার প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে একর প্রতি ২০০-২৫০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

চারা তৈরিঃ

ফুলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করে জমিতে লাগানো হয়। বীজতলার আকার ১মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত। সমপরিমাণ মাটি,বালি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়।দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপনের আগে ৭/৮ দিন পূর্বে প্রতি বীজতলায় ১০০গ্রাম ইউরিয়া,১৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।পরে চারা ঠিকমতো না বাড়লে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমান ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেওয়া ভালো।

চারা রোপণ ও রোপণের দূরত্বঃ

বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করতে হয়। চারায় ৫-৬টি পাতা হলেই তা রোপণের উপযুক্ত হয়। সাধারণত ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করা হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব দেয়া লাগে ৬০ সে.মি. বা ২ ফুট এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব দিতে হবে ৪৫সে.মি. বা দেড় ফুট। চারা রোপণের সময় সানধান থাকতে হবে যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যেতে পারে। কেন না এতে মাটিতে চারার প্রতিষ্ঠা পেতে দেরি হয় ও বৃদ্ধি কমে যায়।

সার ব্যবস্হাপনাঃ

পচা গোবর জমি তৈরির সময় ৫০ কেজি দিতে হবে। প্রতি শতকে শেষ চাষের সময় ২৫০ গ্রাম, তার ২০ দিন পর ৫০০ গ্রাম এবং ৩৫দিন পর দিতে হবে।টিএসপি শেষ চাষের সময় ৭০০ গ্রাম দিতে হবে। এমওপি শেষ চাষের সময় ২০০ গ্রাম,২০ দিনপর ৩০০ গ্রাম এবং ৩৫ দিন পর ২০০ গ্রান দিতে হবে। জিপসাম জমি তৈরির সময় ৪০০ গ্রাম দিতে হবে। জিংক সালফেট শেষ চাষের পর ৪০ গ্রাম এবং সোহাগা শেষ চাষের সময় ৪০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ ও আগাছা দমনঃ

সার দেয়ার পরপরই সেচ দিতে হবে। এছাড়া জমি শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে। জমিতে পানি বেশি সময় ধরে যেন জমে না থাকে সেটাও খেয়াল করতে হবে। সার দেয়ার আগে মাটির আস্তর ভেঙে দিয়ে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

বিশেষ পরিচর্যাঃ

ফুলকপি গাছের সারির মাঝে সার দেওয়ার পর সারির মাঝখানের মাটি তুলে দু’পাশ থেকে পাতা টেনে বেঁধে ফুল ঢেকে দিতে হবে। সূর্যের আলো সরাসরি ফুলের রঙ তথা ফুলকপির রঙ হলুদাভ হয়ে যাবে।

পোকামাকড় ব্যবস্থাপনাঃ

এদেশে ফুলকপির সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হলো মাথা খেকো লেদা পোকা। নাবী করে লাগালে সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ বেশি ক্ষতি করে, অন্যান্য পোকার মধ্যে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, কালো ও হলুদ বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি মাঝে মাঝে ক্ষতি করে থাকে।

রোগ ব্যাবস্থাপনাঃ

ফুলকপির পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ধ্বসা বা ড্যাম্পিং অফ,ক্লাব রুট বা গদাইমূল, মোজাইক,পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে। বোরন সারের অভাবে ফুলে বাদামী দাগ পড়ে ও কান্ড ফাঁপা হয়ে যায়।

ফসল তোলা ও ফলনঃ

সাদা রঙ ও আঁটসাঁট থাকতে থাকতেই ফুলকপি তুলে ফেলা উচিত। মাথা ঢিলা ও রঙ হলদে ভাব ধরলে দাম কমে যায়। একর প্রতি ফলন ১৫-২৫ টন,হেক্টর ৩৫-৬০টন।কেঁচ সার দিলে ফুলকপির ভালো ফলন পাওয়া যায়।

পুষ্টি মূল্য ও ব্যাবহারঃ

ফুলকপিতে যথেষ্ট পরিমাণে সালফার, পটাসিয়াম ও ফসফরাস খনিজ উপাদান আছে। এ ছাড়া এর প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণ যোগ্য অংশে আছে পানি ৯০.৮ গ্রাম,আমিষ ২.৬ গ্রাম,চর্বি ০.৪ গ্রাম, শ্বেতসার ৪.০ গ্রাম,খনিজ লবণ ১.৯ গ্রাম ইত্যাদি।

লেখকঃ আয়েশা আকতার- (৭ম পর্ব),
ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার,
এগ্রিকালচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট,
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

Related News
- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!