Home News আবরার ফাহাদ হত্যায় বহিস্কৃত বিটুর ক্লাসে অংশগ্রহণ,শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আবরার ফাহাদ হত্যায় বহিস্কৃত বিটুর ক্লাসে অংশগ্রহণ,শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

0
আবরার ফাহাদ হত্যায় বহিস্কৃত বিটুর ক্লাসে অংশগ্রহণ,শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)’র মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হওয়া শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বিটুর একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

২৭ মে (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)’র সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যনারে একাডেমিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, আজীবন বহিস্কৃত আশিকুল ইসলাম বিটুর একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আজকের এ-ই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা।

আবরার ফাহাদ হত্যায় বহিস্কৃত বিটুর ক্লাসে অংশগ্রহণ,শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
আবরার ফাহাদ হত্যায় বহিস্কৃত বিটুর ক্লাসে অংশগ্রহণ,শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আমরা বলতে চাই, বুয়েটের অফিসিয়াল স্মারক নং ডি.এস. ডব্লিউ./ ডি-৩৪ অনুযায়ী বিগত ২১ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স এন্ড ডিসিপ্লিন উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত ২৬ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য (স্থায়ীভাবে) বহিষ্কার করে, যার মধ্যে একজন আশিকুল ইসলাম বিটু (১৬০২০১৬)।

বিগত ২২ মে, ২০২১ তারিখে কেমিকৌশল ‘১৭ ব্যাচের একটি কোর্সের ক্লাসে বহিস্কৃত আশিকুল ইসলাম বিটুকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি যে, বিগত ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখে আশিকুল ইসলাম বিটু তার বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত হতে স্থগিতাদেশ পায় এবং বুয়েটে তার একাডেমিক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করে।

৪ এপ্রিল, ২০২১ তারিখে বুয়েট প্রশাসন আবেদনের সাপেক্ষে আশিকুল ইসলাম বিটুকে ক্লাস করার অনুমতি প্রদান করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল প্রদান ও বুয়েটের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার প্ল্যাটফর্ম মাইক্রোসফট টিমসের সংশ্লিষ্ট কোর্সগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এর মাধ্যমে তাকে কেমিকৌশল ‘১৭ ব্যাচের সাথে লেভেল-৩ টার্ম-১ এর অন্তত ৪টি কোর্সে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

এই ঘটনার পর থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বুয়েটের অভ্যন্তরীণ তদন্তের ভিত্তিতে আবরার ফাহাদ হত্যা ঘটনায় সম্পৃক্ততা ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে র‍্যাগিং-নির্যাতনের বহু ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠে আসে।

উল্লিখিত ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা বুয়েটের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বিটুর সাথে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে কোনো শর্তেই ইচ্ছুক না এই মর্মে বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি উত্থাপন করি।

এছাড়াও ২৯ মে, ২০২১ তারিখের মধ্যে কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবিগুলো কার্যকর না করলে বুয়েটের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী ৩০ মে, ২০২১ তারিখ হতে একাডেমিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে বাধ্য হবে।

তারই ধারাবাহিকতায় প্রশাসন দ্রুততম সময়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন যে, আশিকুল ইসলাম বিটুর কোর্স রেজিস্ট্রেশন এখনো সম্পন্ন হয়নি, বিধায় সে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবে না এবং কোর্সগুলোতে তার অন্তর্ভুক্তি বাতিল করা হয়েছে। বুয়েট প্রশাসন আমাদের এই মর্মে আশ্বাস প্রদান করেছে যে, অবিলম্বে আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

আমাদের ন্যায্য দাবির ভিত্তিতে বুয়েট প্রশাসনের এই তৎপরতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

আমরা আশাবাদী যে, বুয়েট প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করবে। এর পাশাপাশি আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড বা র‍্যাগিং এর মতো ঘৃণ্য অপরাধের জন্য স্থায়ীভাবে বহিস্কৃত কেউ যেন কখনো একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরত আসতে না পারে, এ ব্যাপারে বুয়েট প্রশাসন যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সদা-তৎপর থাকবে।

আমাদের প্রত্যাশা এই যে, ২৯ মে, ২০২১ তারিখের মধ্যে বুয়েট প্রশাসন তাদের গৃহিত পদক্ষেপ সমূহ এবং ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতি অফিশিয়াল বিবৃতি/নোটিশ আকারে প্রকাশ করবেন।

পরবর্তীতে আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা দুইটি বিষয় বিবেচনা করছি-

১) ২৯ মে, ২০২১ তারিখের মধ্যে বুয়েট প্রশাসন আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
২) কোনো কারণে এই সময়ের মধ্যে আপিল করতে না পারলে, আপিল করার প্রতিশ্রুতি একটি গ্রহণযোগ্য সময়সীমাসহ        অফিশিয়াল বিবৃতি/নোটিশে অন্তর্ভুক্ত করবেন।

উপর্যুক্ত বিষয় দুইটির যেকোনো একটি কার্যকরের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পুনর্বিবেচনা করে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবো।

উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ড পরবর্তী সময়ে বুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসকল দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করার ব্যাপারে বুয়েট প্রশাসন একইভাবে তৎপর থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। পরিশেষে, নৈতিকতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে আমরা ভবিষ্যতেও সোচ্চার থাকবো।

মানববন্ধন বুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় কয়েকশো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

error: Content is protected !!
Exit mobile version