Friday, April 26, 2024
HomeNewsসিঙ্গাপুরে রুপান্তর হচ্ছে মাতারবাড়ি; ফাইলবন্দি ধলঘাটার সড়ক

সিঙ্গাপুরে রুপান্তর হচ্ছে মাতারবাড়ি; ফাইলবন্দি ধলঘাটার সড়ক

আবু বক্কর ছিদ্দিকঃ

কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর উপদ্বীপ ধলঘাটা ইউনিয়নের প্রধান সড়কের বেহাল দশা। সড়কে চলাচলের অনুপযোগী হলেও দেখার যেন কেউ নেই।

মহেশখালীকে ঘিরে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মহাযজ্ঞ শুরু হলেও, এখনো অবহেলিত রয়েছে প্রত্যন্ত জনপথ। তার মধ্যে সব চেয়ে বেশী অবহেলিত রয়েছে ধলঘাটাবাসী।

বর্তমানে এই দ্বীপে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পসহ বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে পুরোদমে। ধলঘাটার দক্ষিণে প্রাকৃতিক ভাবে জেগে উঠা বিশাল হাঁসের চরটি দখল করে সেখানেও চলছে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ।

হাঁসের চরে বিশালাকার প্যারাবন নিধন করে বেজা কর্তৃক অর্থনৈতিক জোন সহ বিভিন্ন প্রকল্প এখন গ্রাস করেছে পুরো ধলঘাটা ইউনিয়ন।

দেশের একমাত্র আধুনিক ও গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ হচ্ছে এই ধলঘাটায়। এতো উন্নয়ন তবুও এই জনপদের মানুষ গুলো রয়েছে অবহেলিত ও অসহায়ত্ব ভাবে।

ধলঘাটায় যাতায়াতের জন্য দুইটি পথ থাকলেও উভয় পথেই চরম নাজুক অবস্থা।

প্রথমত বদরখালী থেকে মহেশখালী উত্তর নলবিলা-চালিয়াতলী হয়ে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প দিয়ে সরাসরি সড়ক পথে যেতে হয় ধলঘাটা।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে কালারমারছড়ার পশ্চিমের নৌপথ। যা নৌকায় চলাচলের জন্য।

মাতারবাড়ী লাগোয়া ধলঘাটার উত্তর প্রান্ত থেকে দক্ষিণে সুতুরিয়া বাজার পর্যন্ত ধলঘাটা ইউনিয়নের একটি মাত্র সড়ক। যা ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে লন্ড ভন্ড হয়ে যায়।

মুলত তখন থেকেই অদ্যবদি এই সড়কটি নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি কোন সরকার। এই জরাজীর্ণ কাঁদা যুক্ত সড়ক দিয়েই চলাচল করছে ধলঘাটাবাসী।

গ্রীষ্মকালে কোনো রকম চলাচল করা গেলেও, বর্ষায় এই সড়ক দিয়ে পায়ে হেটে চলাচলও মুশকিল।

বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের উপরের মহল থেকে সড়কটি টেকসই ভাবে নির্মাণের আশ্বাস দিলেও অদৃশ্য কারনে ফাইলবন্দি হয়ে যায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।

ফলে আর নির্মাণ করা হয় না এই সড়কটি।

সেই ১৯৯১ সাল থেকে অদ্যবদি সিমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করে আসছে ধলঘাটাবাসী।

এব্যাপার স্থানীয় অনেকের সাথে কথা বললে তারা আক্ষেপ করে বলেন , সড়ক নিয়ে কষ্ট যা পাওয়ার তাতো বিগত ৩০ বছরে পেয়ে গেছি । আর এখন উন্নত সড়ক দিয়ে কি করবো?

ধলঘাটার জায়গা তো প্রায় নিয়ে যাচ্ছে , এখানে স্থানীয় কোন লোকই থাকতে পারবে না, তাহলে সড়কের কি দরকার।

ধলঘাটা থেকে মাতারবাডী বা বিভিন্ন এলাকায় যেতে হলে আমাদের কে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প দিয়ে যেতে হয় , ফলে প্রকল্প লাগোয়া নাছির মোহাম্মদ ডেইল স্টেশনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকলেও গাড়ীর সন্ধান পাওয়া যায় না। এ কারণে অনেক সময় রোগী নিয়ে জরুরী হাসপাতাল যেতে হলে সীমাহীন বেকায়দায় পড়তে হয় ধলঘাটাবাসীকে।

আর গাড়ী মিললেও ধলঘাটা নাছির মোহাম্মদ ডেইল থেকে মাতারবাড়ী সাইরার ডেইল যেতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘন্টা পর্যন্ত। এটি মুলত ১৫ মিনিটের পথ হলেও কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পুর্ব পাশে কোহেলীয়া নদীর পাড় হয়ে মাতারবাড়ী সাইরার ডেইল আসতে সময় লেগে যায় প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টা পর্যন্ত।

মাতারবাড়ী-ধলঘাটায় এতো উন্নয়ন তবুও দূর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের।

এদিকে এসব দূর্ভোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় সাধারণ জনগণ প্রতিবাদ জানালেও এ নিয়ে কোন জনপ্রতিনিধি বা সরকার দলীয় কোন রাজনৈতিক নেতা জোরালো প্রতিবাদ করেনি, এমটি অভিযোগ করেছেন স্থানীয়দের।

ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন , সুতুরিয়া বাজার থেকে নাছির মোহাম্মদ ডেইল পর্যন্ত সড়কটি গত বছর প্রায় ১৮/২৪ ফুট প্রশস্ত করে টেকসই ভাবে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু গেল ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগর থেকে পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন জায়গায় বিলিন হয়ে যায় সড়কটি।

সড়কে কিছু অংশ ভাল থাকলেও উত্তর সুতুরিয়া এলাকায় চিংড়ি প্রজেক্টের ইজারাদাররা প্রজেক্টে অতিরিক্ত পানি বন্ধি রাখার কারনে উক্ত স্থানে সড়কের ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান। চেয়ারম্যান কামরুল হাসান আরো বলেন, সুতুরিয়া থেকে নাছির মোহাম্মদ ডেইল পর্যন্ত সড়কটি অত্যাধুনিক ভাবে নির্মাণে জন্য জাইকা ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা রয়েছে।

একারণেও এলজিইডি অফিস সড়কটি নির্মাণে হাত দিচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। তবে যেভাবে হউক ধলঘাটাবাসীর কল্যাণে সড়কটি যাতে দ্রুত টেকসই নির্মাণ করা হয় সে ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

মহেশখালী উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ কুমার দে জানান, ধলঘাটা সড়কটি আমি বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। আসলে সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক, সড়কটি টেকসই নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আপাতত ৩ কিলোমিটার সড়কটি সংস্কার করা হবে, এজন্য আগামী সপ্তাহে সার্ভেয়ার পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

Related News
- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!