Friday, April 26, 2024
HomeNewsমসজিদ মাদ্রাসা উন্মুক্ত রাখতে সরকারের প্রতি খোলা চিঠি

মসজিদ মাদ্রাসা উন্মুক্ত রাখতে সরকারের প্রতি খোলা চিঠি

মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগি নির্বিঘ্ন রাখতে মসজিদে মুসল্লীদের উপস্থিতির ওপর বিধিনিষেধ বাতিল এবং দেশের সব নাজেরা ও হেফজখানাকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের প্রধান মুফতিয়ে আযম আল্লামা আবদুচ্ছালাম চাটগাঁমী

১৫ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে তিনি এ আহ্বান জানান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আল্লামা আবদুচ্ছালাম চাটগাঁমীর ছেলে মাওলানা মুফতি ইসমাইল।

খোলা চিঠিতে আল্লামা আবদুচ্ছালাম চাটগাঁমী বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিদ্যমান। এতে বিশ্বের বহু দেশে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ ও আক্রান্ত হয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় এ সময়ে বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর হার অনেক কম ছিল।

উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে মসজিদ-মাদরাসা উন্মুক্ত থাকায় লাখ লাখ মাদ্রাসা ছাত্র, উলামায়ে কেরাম ও মুসল্লীদের ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযগার ও দোয়ার বরকতে বাংলাদেশে করোনা মহামারির ক্ষয়ক্ষতি অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন,

বুধবার থেকে পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক শুরু হয়েছে। এই মাস ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময়। এই মাসে রোযা, নামায, যাকাত ইত্যাদি ফরয আমলসমূহের সাওয়াব সত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়।

এছাড়া সব নফল আমলসমূহের সাওয়াব ফরযের সমতুল্য হয়ে যায়। এই মাসে শ্রমিক মজদুরসহ অধিনস্থদের কাজ সহজ করলে গুনাহ মাফ করা হয়। রোযাদারগণকে আহার ও ইফতার করালে এক এক রোযার সাওয়াব বৃদ্ধি এবং জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি লাভ হয়। এসব কিছু আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল (সা.)এর সিদ্ধান্ত, যেটা অনুসরণ করা সকল মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। আর এসব অমান্য করা আল্লাহ তাআলা এবং তার রাসূল (সা.) এর অবাধ্যতার শামিল।

মসজিদ মাদ্রাসা উন্মুক্ত রাখার চিঠিতে মুফতিয়ে আযম আব্দুচ্ছালাম চাটগাঁমী আরও বলেন,

বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে সরকার নতুন করে দেশব্যাপী মাদরাসাসমূহ বন্ধের ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি মসজিদসমূহে মুসল্লীদের উপস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এতে করে সাধারণ মুসলমানদের উপর জামাআ’তে নামায আদায়সহ শরীয়তের হুকুম-আহকাম আদায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন,

করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ জনস্বার্থেই নেওয়া হয়েছে বলে মনে করি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে নাজেরা ও হেফজখানা বন্ধ ও মসজিদে মুসল্লিদের সংখ্যা নির্ধারণ করে সরকারি বিধি জারি কোনভাবেই যৌক্তিক ও প্রত্যাশিত নয়।

কারণ, প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ের আকুতি, মহামারির এমন ভয়াবহ বিপদ ও জীবনের অনিশ্চিত সময়ে তারা প্রাণভরে আল্লাহর ইবাদত করবেন, আল্লাহর ঘরে গিয়ে তাওবা, ইসতিগফার, নামায, তিলাওয়াত ও কান্নাকাটি করে আল্লাহর কাছে আর্জি পেশ করবেন এবং নিজের জন্য, জাতির জন্য ও দেশের জন্য সাহায্য চাইবেন।

কিন্তু তাদেরকে এটা করতে না দেওয়া মানসিক নিপীড়নের শামিল। এতে আল্লাহর ক্রোধ ও মহামারির বিপদ বেড়ে যাওয়ার সমূহ আশংকা বেড়ে যায়। তাছাড়া গত দশ মাস ধরে দেশের সকল কওমি মাদ্রাসা এবং মক্তব/হেফজখানা চালু থাকাকালীন কোন মাদ্রাসায় করোনায় মৃত্যুর খবর দেখা যায়নি।

তাই মসজিদ মাদ্রাসা খোলা রাখতে করজোরে অনুরোধ করেন উক্ত মাদ্রাসা পরিচালক।

চিঠিতে তিনি আরও বলেন,

দেশব্যাপী চলমান লকডাউন পরিস্থিতেও শহর এবং গ্রাম এলাকার প্রত্যেকটি বাজার, নিত্য পণ্যের দোকান ও ব্যাংকসমূহে দীর্ঘ সময় মানুষের জনসমাগম ও উপচে পড়া ভিড় চলছে। গার্মেন্টসসহ কলকারখানা চালু রয়েছে।

অথচ আল্লাহর হুকুম ফরয নামায, জুমা, পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও তারাবিহ আদায়ের অল্প সময়ের জন্য মুসল্লিদের মসজিদে উপস্থিতির ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ ও সংখ্যা নির্ধারণ করার যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।

তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি মসজিদের জামাতে মুসল্লীদের উপস্থিতিসহ অন্যান্য যে সব প্রতিবন্ধকতা জারি করা হয়েছে, তা তুলে নেওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

Related News
- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!