Home 12 ফসলের মাজরা পোকা দমন পদ্ধতি

ফসলের মাজরা পোকা দমন পদ্ধতি

0

ফসলের মাজরা পোকা দমন পদ্ধতি

মোঃ সোহাগ হোসেন

বোরো, আউশ এবং আমন এই তিন মৌসুমেই এই পোকার আক্রমণ দেখা যায়।

বাংলাদেশে তিন ধরনের মাজরা পোকা ধানের ক্ষতি করে থাকে।

যেমনঃ হলুদ মাজরা, কালো মাথা মাজরা এবং গোলাপী মাজরা পোকা।

এই পোকাগুলোর কীড়ার রং অনুযায়ী তাদের নামকরণ করা হয়েছে। এদের আকৃতি ও জীবন বৃত্তান্তে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও ক্ষতির ধরণ এবং দমন পদ্ধতি একই রকম। হলুদ মাজরা পোকা প্রধানত বেশী আক্রমণ করে।

নিম্নে হলুদ মাজরা পোকার বিবরণ দেয়া হলোঃ

হলুদ মাজরা পোকার বিবরণ- পূর্ণ বয়স্ক হলুদ মাজরা পোকা এক ধরনের মথ। স্ত্রী পোকার পাখার উপরে দুটো কালো ফোঁটা আছে। পুরুষ মথের পাখার মাঝখানের ফোঁটা দুটো স্পষ্ট নয় তবে পাখার পিছন দিকে ৭-৮ টা অস্পষ্ট ফোঁটা আছে। হলুদ মাজরা পোকার স্ত্রী মথ ধান গাছের পাতার আগার দিকে গাদা করে ডিম পাড়ে। এক সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে কীড়া বের হয়। কীড়ার রং সাদাটে হলুদ। কীড়াগুলো কান্ডের ভিতরে প্রবেশ করে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহে পুত্তলিতে পরিণত হয়। তবে শীতকালে কীড়ার স্থিতিকাল ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে। পুত্তলিগুলো এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে বয়স্ক পোকায় পরিণত হয় এবং কান্ডের ভিতর থেকে বের হয়ে আসে।

ক্ষতির ধরণঃ ধান গাছের বৃদ্ধির ২ পর্যায়ে মাজরা পোকা ক্ষতি করে। ধান গাছের কুশি পর্যায়ে মাজরা পোকার কীড়া কান্ডের ভিতর থেকে খেয়ে ফেলে, এক পর্যায়ে মাঝখানের ডিগ কেটে ফেলে। ফলে মরা ডিগের সৃষ্টি হয়। আর ধান গাছে থোড় হওয়ার পর বা শীষ আসার সময় ডিগ কাটলে সম্পূর্ণ শীষ মারা যায় এবং সাদা হয়ে যায় বলে একে ‘মরা শীষ/সাদা শীষ’ বলে।

লক্ষণীয়ঃ নেক ব্লাস্ট রোগের কারণেও সাদা শীষ দেখা যায়, তবে এক্ষেত্রে আক্রান্ত শিষটি টান দিলে উঠে আসে না। কিন্ত মাজরা পোকার আক্রমণ হলে শীষ টান দিলে উঠে আসে এবং মাজরা পোকার কীড়া দেখা যায়।

জৈবিক পদ্ধতিতে দমনঃ

মাজরা পোকার ডিমের গাদা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে পারলে আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়। জমিতে ডাল পালা পুঁতে দিয়ে পোকা খেকো পাখির সাহায্যে পোকার সংখ্যা কমানো যায়। সন্ধ্যার সময় আলোক ফাঁদের সাহায্যে মথ আকৃষ্ট করে মেরে ফেলা।

রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ

প্রতিরোধক হিসাবে দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করা যায়। এতে মাজরা পোকা দমনের পাশাপাশি মাটিতে বসবাসকারী ক্ষতিকারক নেমাটোড সফল ভাবে দমন হয় এবং ধানের ফলন বৃদ্ধি পায়। দানাদার কীটনাশক ব্যবহারের সময় জমিতে অবশ্যই পানি থাকতে হবে।

আক্রমন দেখা গেলে অথবা ধানের জমিতে ১০০ টি কুশির মধ্যে ১০-১৫ টি মরা কুশি অথবা ৫ টি মরা শীষ/সাদা শীষ পাওয়া গেলে নিম্নোক্ত যে কোন একটি কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় বীজতলা বা জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

প্রয়োগের মাত্রাঃ একর প্রতি/ বিঘা প্রতি/ শতাংশ প্রতি-

* ব্রিফার ৫ জি (দানাদার)
৪.০৫ কেজি,
১.৩৪ কেজি,
৪০ গ্রাম।

* রাজধান ১০ জি (দানাদার),
৬.৮০ কেজি,
২.২৪ কেজি,
৬.৭ গ্রাম।

* গুলী ৩ জি আর (দানাদার),
৪.০৫ কেজি,
১.৩৪ কেজি,
৪০ গ্রাম,

* রিলোড ১৮ এস সি (তরল)
১০১.২ মি.লি.
৩৩.৪ মি.লি.
১.০১২ মি.লি.

অনুমোদিত অন্যান্য কীটনাশক-
প্রয়োগ মাত্রা; একর প্রতি/ বিঘা প্রতি/ শতাংশ প্রতি–

* ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউ জি
৩০.৩৬ গ্রাম,
১০.১০ গ্রাম,
০.৩০ গ্রাম।

* ফুরাডান ৫ জি
৪.০৫ কেজি,
১.৩৪ কেজি,
৪০ গ্রাম।

*সানফুরান ৫ জি
৪.০৫ কেজি,
১.৩৪ কেজি,
৪০ গ্রাম।

* বিষ্টারেন ৫ জি

৪.০৫ কেজি,
১.৩৪ কেজি,
৪০ গ্রাম।

* মার্শাল ২০ ই সি
৬০০ মি.লি.
১৯৮ মি.লি.
৬ মি.লি.

* ফারটেরা ০.৪ জি
৪.০৫ কেজি,
১.৩৪ কেজি,
৪০ গ্রাম।

* রিজেন্ট ৩ জি আর
৪.০৫ কেজি,
১.৩৪ কেজি,
৪০ গ্রাম।

*কার্টাপ ৫০ এস পি
৫৭ গ্রাম,
১৯০ গ্রাম,
৫.৭ গ্রাম।

লেখক-
মোঃ সোহাগ হোসেন,
ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার,
এগ্রিকালচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, সাঁটুরিয়া, মানিকগঞ্জ।

error: Content is protected !!
Exit mobile version