Home Editorial ডাক্তার-নির্বাহী হাকিম- পুলিশ

ডাক্তার-নির্বাহী হাকিম- পুলিশ

0

ডাক্তারদের মুভমেন্ট পাশ লাগবেনা আগে থেকেই নির্ধারিত। কিন্তু পুলিশ আর নির্বাহী হাকিম গো-ধরে আছে ডাক্তার কে আটকানোর। তাহলে, যারা আইন প্রয়োগ করছে তারা কি জানেনা বিষয়টি? একজন নির্বাহী হাকিম হয়েও তিনি বিষয়টি জানতেন না? সারা শহরে শতশত লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাউকে সেভাবে আটকাতে, নাজেহাল করতে দেখা গেলো না! কোন এক রহস্যময় কারণে ডাক্তারকে ( তারপর তিনি একজন নারীও) তাঁদের আটকানোটা ফরজে আইন হয়ে গেলো।

আবার, নিজেদের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে হুমকি দেওয়া শুরু করলো। কি নির্বাহী হাকিম, কি পুলিশ, কি ডাক্তার সবাই দেখি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান! এমন উত্তেজিত, কর্কষ, অকথ্য- অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের রেফারেন্স দেওয়া, নিজকে জাহির করা কি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আনার চেষ্টা?

আগের দিনে নিজেকে জাহির করে অন্যকে হুমকি দেওয়ার জন্য লোকজন এলাকার প্রভাবশালী ডাকাত বা সন্ত্রাসের কথা বলতো। লোকে বলতো, আমি কানকাটা ফজর আলীর এলাকার লোক, আমি এরশাদ শিকদারের লোক, আমি হাজারীর লোক। এখন বলা হচ্ছে, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এতে করে উঠতি প্রজন্ম কি বার্তা পাচ্ছে? একদিন তারা কি মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনলে ভয় পাবেনা? অথচ, তাদের তো মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনলে শ্রদ্ধায়, সম্মানে মাথানত হওয়ার কথা ছিলো।

আমার মনে পড়ে, যখন আমি ছাত্রজীবনে চট্রগ্রাম শহরে থাকতাম, তখন আমার বাসা যে বাড়িতে তার কয়েকটা বাড়ি পর একটা বাড়ি ছিলো যে বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আগরতলা থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত, ফেনীতে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তারপায়ে গুলির চিহ্ন আজো বর্তমান। আমি সময় পেলে মাঝেমাঝে তার সাথে বসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতাম।

যেদিন প্রথম তাঁর সাথে আমার পরিচয় হয়, তাঁকে আমি শ্রদ্ধায় পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছি, অথচ তিনি ছিলেন একজন বাড়ির কেয়ারটেকার বা দারোয়ান। আমার কখনো মনে হয়নি তিনি একজন কেয়ারটেকার। তার শারীরিক ভাষা ও মুখে-চোখে আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকেই দেখেছি, যিনি নিজের জীবনের মায়া না করে দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

যাইহোক, মুলবিষয়ে আসি।

একজন ডাক্তারের আইডি কার্ড দেখতে হয়না। নিশ্চয় এই লকডাউনের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গায়ে সাদা এপ্রোন পড়ে, গাড়ীর সামনে সহযোগী অধ্যাপক – বিএসএমএমইউ লেখা স্টিকার লাগিয়ে সকালে কেউ বের হবেন না। শুনেছি বিসিএসে মানসিক দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হয়, চুড়ান্ত সাক্ষাতকারে সাইকোলজি টেস্ট দিতে হয়। প্রশ্ন হলো, এই ভদ্রমহিলাকে ও তার সাথে অন্যান্য অনুষঙ্গ দেখে একজন নির্বাহী হাকিম মিনিমাম সেন্সে তাঁকে চিনতে পারলো না কেন? তাঁর আইডি কার্ড দেখাটা কেন জরুরী হয়ে পড়লো? তাহলে, আমরা কি ধরে নিবো ওই নির্বাহী হাকিম সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিসিএস প্রশাসনে যুক্ত হন নি! কিংবা তিনি তার কর্মদায়িত্ব পালনে আনফিট!

আইনত একজন অভিযুক্ত যদি নারী হন, তাহলে নারী দিয়েই তাঁকে জেরা করতে হয়। এক্ষেত্রে জনা- পাঁচেক পুরুষ তাঁকে যেভাবে জেরা করেছেন এবং তাঁর উপর মানসিক চাপ তৈরি করেছেন তাও শিষ্টাচার বিবর্জিত ও বেআইনী। এই ডাক্তার ঘটনার দিন সুস্থ মনে রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারবেন কিনা, সে প্রশ্নও থাকছে।

মোটাদাগে আমরা কি তাহলে সেই প্রশ্নের উত্তর পেলাম, “কেন আজ-কালকার ছেলে-মেয়েরা বুয়েট/মেডিক্যালে পড়েও বিসিএস প্রশাসনে যুক্ত হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ?

সাধু ফকির
বিশ্লেষক, উন্নয়ন কর্মী, আধ্যাত্মিক বক্তা ও সংস্কারক

error: Content is protected !!
Exit mobile version