সবজি হিসাবে আমাদের দেশে চাল কুমড়ার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। ঘরের চালে এ সবজি ফলানো হয় বলে এটি চাল কুমড়া নামে পরিচিত।
তবে চাল কুমড়া শুধু চালে নয় ইহা জমিতে মাচায় চাষ করলে ফলন বেশি হয়। তাছাড়া টবে চাল কুমড়া চাষ করা যায়।
সবুজ কচি চাল কুমড়া তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। শুধু চাল কুমড়াই নয় এর কচি পাতা ও ডগা খাওয়া যায়। আর চুনের মত সাদা চাল কুমড়া দিয়ে বড়ি, মোরব্বা ও হালুয়া তৈরি করা যায়।
কিভাবে চাল কুমড়া দিয়ে মোরব্বা তৈরি করবেন সে টিউটরিয়াল অন্য একদিন আলোচনা করা হবে। আমাদের আগের টিউটরিয়াল গুলো দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আজকে আমরা চাল কুমড়ার চাষ পদ্ধতি, চাল কুমড়ার উন্নত জাত, চাল কুমড়ার পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন শুরু করা যাক।
চাল কুমড়ার পুষ্টিগুণঃ
প্রত্যেক সবজির মত চাল কুমড়া পুষ্টিকর সবজি। চাল কুমড়াই বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, আমিষ, শর্করা, চর্বি ও ক্যালসিয়াম রয়েছে।
চাল কুমড়ার ঔষধিগুণঃ
অন্যান্য ফপ্সলের চেয়েও চাল কুমড়ার বড়ি ও মোরব্বা ফুসফুসের জন্য উপকারী। চাল কুমড়ার বীজ কৃমি নাশ করে থাকে। এবং এর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে অজীর্ণ রোগ ভাল হয়।
চাল কুমড়ার জাত নির্বাচনঃ
আমাদের দেশে একটি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন হয়েছে যা বার মাসই চাষ করা যায়। নাম তার বারি চাল কুমড়া-১। সম্প্রতি আমাদের দেশে হাইব্রিড জাতের চালকুমড়ার বীজও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
এসব জাতের মধ্যে জুপিটার, ইউনিক, ভেনাস, পানডা, সুমাইয়া, বাসন্তী, নিরালা, মনি, দেব-১২০৩, মাধবী ইত্যাদি অন্যতম।
চাল কুমড়া চাষে মাটি নির্বাচনঃ
প্রায় সব ধরনের মাটিতে চাল কুমড়া চাষ করা যায়। তবে চাল কুমড়া চাষের জন্য দো-আঁশ ও এটেল দো-আঁশ মাটি উত্তম।
তাই যখন চাল কুমড়া চাষ করতে যাবেন তখন মাটি নির্বাচন ঠিকভাবে করবেন।
চাল কুমড়ার বীজ বপনের সময়ঃ
টবে, বাড়ির ছাদে, মাচাতে চাল কুমড়া করতে হলে সময় বুঝতে হবে। সারা বছরই চাল কুমড়ার চাষ করা যায়। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
চাল কুমড়া চাষে বীজের পরিমাণঃ
প্রতি শতাংশ জমিতে প্রায় ১৫-২০ গ্রাম বীজের দরকার হয়। সে হিসেবে চাল কুমড়া চাষ করতে হবে।
চাল কুমড়া চাষে জমি তৈরি ও বীজ বপনঃ
চাল কুমড়া যদি বসতবাড়িতে করতে চান সেক্ষেত্রে ঘরের কোণে মাদা তৈরি করে তাতে ৩-৪টি বীজ বপন করতে হবে। এবং চারা গজালে ও একটু বড় হলে বাঁশের কঞ্চি বা পাট কাঠি চারার গোড়ায় পুঁতে দিয়ে চারাগুলো চালায় তুলে দিতে হবে।
আর জমিতে চাষ করলে জমি ভাল করে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
তারপর জমিতে মাদা তৈরি করে ৪-৫টি বীজ বপণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন বৃষ্টির বা বন্যার পানি জমে না থাকে।এরপর ২.৫ ফুট চওড়া ২ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করতে হবে। ২ থেকে ২.৫০ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করে বীজ বুনতে হবে।
চাল কুমড়ায় সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
ইউরিয়া ১০-১২ কেজি, টিএসপি ৮-১০ কেজি, মিউরেট অব পটাশ ৩-৫ কেজি, জিপসাম ৩ কেজি, জিংক, অক্সাইড ১০০-১৫০ গ্রাম ও জৈব সার যত দেওয়া যায় তত ভাল। (শতাংশ অনুযায়ী)
ইউরিয়া সার ছাড়া অন্যান্য সব সার বীজ বোনার ৫-৭ দিন আগে জমি তৈরি করার সময় মাদার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
চাল কুমড়া পরিচর্যার নিয়মঃ
প্রত্যেক মাদায় সুস্থ সবল ২-৩ চারা রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। নিয়মিত বিশেষ করে গাছের গোড়ার আগাছাগুলো পরিষ্কার ও গোড়ার মাটি কুপিয়ে আলগা করে দিতে হবে। জমির মাটিতে রস না থাকলে সেচ দিতে হবে। বর্ষার পানি নিকাশের জন্য নালার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে মাচা তৈরি করে দিতে হবে।
চাল কুমড়ার পোকা-মাকড় দমন পদ্ধতিঃ
চাল কুমড়া গাছে বিভিন্ন পোকার আক্রমন হয়। এসকল পোকার মধ্যে মাছি পোকা সবচেয়ে ক্ষতিকর। মাছি পোকার আক্রমনে চালকুমড়ার ফলন মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হয়।
এই পোকা প্রথমে চাল কুমড়ার ফুলের মধ্যে ডিম পাড়ে, পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের ভেতর খেয়ে ফল নষ্ট করে ফেলে। এপোকার জন্য ফলন নষ্ট হয় ৫০-৬০ ভাগ।
তাই আমাদের কঠোরভাবে মাছি পোকা দমন করতে হবে। এই পোকা দমন করার প্রথম উপায় হচ্ছে- পোকা দেখা মাত্র মেরে ফেলা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা। এ পোকা মারার ফাঁদ তৈরি করা এবং বিষটোপ ব্যবহার করা।
চাল কুমড়ার ফসল সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়ঃ
চাল কুমড়া গাছ লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করে। চাল কুমড়া সবজি হিসেবে খেতে হলে সবুজ হুল যুক্ত ৪০০-৬০০ গ্রাম হলে তুলতে হবে।
মোরব্বা বা বড়ি দেওয়ার জন্য পরিপক্ক করে ১২০-১৩০ দিন পর তুলতে হবে।