Thursday, March 28, 2024
HomeAgriculturalভিয়েতনামি নারিকেল চাষ পদ্ধতি

ভিয়েতনামি নারিকেল চাষ পদ্ধতি

ভিয়েতনামি নারিকেল কি?

ভিয়েতনামি নারিকেল বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। এটা এমন এক বৃক্ষ যার প্রতিটি অঙ্গ জনজীবনে কোনো না কোনোভাবে কাজে আসে।

আমাদের দেশে বর্তমানে নারিকেলের যে সব জাতের প্রচলন আছে-

  • সেগুলো মূলত লম্বা জাতের,
  • ফলন তুলনামুলকভাবে কম,
  • ফল প্রাপ্তির সংখা বছরে ৫০-৬০ টি এবং
  • ফলন পেতে স্বাভাবিকভাবে ৭ থেকে ৮ বছর সময় লাগে।

নারিকেলের ফলন যাতে তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়-
তাই নতুন এ “ডিজে সম্পূর্ণ ডোয়ার্ফ” (খাটো)
জাতের নারিকেল আবাদের ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে।

এ ভিয়েতনামি নারিকেল গাছ তিন বছরের মাথায় উচ্চতা হবে দুই থেকে আড়াই ফুট।

ভিয়েতনামি নারিকেল চাষে লাভ কেমন হয়?

নতুন জাতের এ নারিকেল গাছ যথাযথ পরিচর্যা করলে ২.৫ থেকে ৩ বছরের মধ্যে ফুল আসা শুরু হবে।
বছরে তিন থেকে চারবার গাছে ফুল আসবে। ফলনের পরিমাণ আমাদের দেশীয় জাতের থেকে প্রায় তিনগুণ।

উপযুক্ত পরিচর্যা করলে প্রতি বছর প্রায় ২০০-২৫০ টি নারিকেল পাওয়া যাবে।
একটি গাছের জীবনকাল ২০ থেকে ২৫ বছর।

খাটো জাতের ভিয়েতনামের ডাবে পানির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে। সাধারণত সব ধরনের মাটিতে খাটো জাতের নারিকেল গাছ লাগানো যায়।

তাছাড়া এ জাতের গাছ লবণাক্ততা অনেক বেশি সহ্য করতে পারে।
নারিকেল গাছ খাটো হওয়ায় পরিচর্যাও সহজ।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ জাতের নারিকেল চাষ শুরু হয়েছে।

ভিয়েতনামি নারিকেল জাতঃ

ভিয়েতনাম থেকে আগত খাটো জাত দুটি হলোঃ

(১)
সিয়াম গ্রীন কোকনাটঃ এটি ডাব হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুবই জনপ্রিয়।
এ জাতের ডাবের রং কিছুটা সবুজ,
আকার কিছুটা ছোট ,
প্রতিটির ওজন ১.২-১.৫ কেজি।
এ জাতের ডাবে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম পানীয় পানি পাওয়া যায়।
বছরে প্রতি গাছে ফল ধরে ১৫০-২০০ টি।

(২)
সিয়াম ব্লু কোকোনাটঃ এটিও অতি জনপ্রিয় জাত।
এটা উদ্ভাবন করা হয় ২০০৫ সালে।
ভিয়েতনামে এ চারা কৃষকের খুবই পছন্দ।
ফলের রং হলুদ, প্রতিটির ওজন ১.২-১.৫ কেজি,
ডাবে পানির পরিমাণ ২৫০-৩০০ গ্রাম।
বছরে প্রতি গাছে ফল ধরে ১৫০-২০০ টি।

ভিয়েতনাম নারিকেল উৎপাদন পদ্ধতিঃ

মাটি দো-আঁশ থেকে বেলে দো-আঁশ মাটি।
তবে সব ধরনের মাটি নারিকেল চাষের জন্য উপযোগী। অতি শক্ত , কাঁকর শীলাময় মাটি হলে প্রায় ১.৫ মিটার চওড়া ও ১.৫ মিটার গভীর।

ভিয়েতনাম নারিকেল গাছে সার প্রয়োগঃ
  • প্রতি গর্তে ২০-২৫ কেজি শুকনো গোবর,
  • ৪-৫কেজি পঁচা পাতা,
  • ৩০০ গ্রাম ডি এ পি সার,
  • ২০০ গ্রাম এম ও পি সার,
  • ২০০ গ্রাম দস্ত,
  • ২০০ গ্রাম জিপসাম,
  • ৩০০ গ্রাম হলদি-
  • ২ কেজি কেচুঁ সার,
  • ৩০০ গ্রাম খৈল,
  • ১০০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট,
  • ২০০ গ্রাম বোরন বা বোরিক এসিড,
  • ৫০ গ্রাম ফুরাডান বা কার্বোফুরান,
    ( প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক মেডিসিন মিশিয়ে)

১০-১২ দিন রেখে দিতে হবে। এর মধ্যে ২ দিন পর পর মাটি উল্টায়ে দিতে হবে। তারপর গাছ রোপণ করবে।

কখন ভিয়েতনাম নারিকেল গাছ রোপণের সময়ঃ

জুন-সেপ্টেম্বর হলো ভিয়েতনাম নারিকেল গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়।

কিভাবে নারিকেল গাছ রোপণ করতে হয়ঃ

রোপণের দূরত্ব- ৬ x ৬ মিটার হিসেবে বাগান আকারে ৭ মিটার দূরত্বে চারা রোপণ করা যাবে।
১মি x ১ মি x ১ মি মাপের গর্ত তৈরি করা প্রয়োজন।

কিভাবে ভিয়েতনাম নারিকেল গাছের চারা রোপণ করতে হয়ঃ

গর্তের মাঝখানে নারিকেল চারা এমনভাবে রোপণ করতে হবে যাতে নারিকেলের খোসা সংলগ্ন চারার গোড়ার অংশ মাটির ওপরে থাকে।

নারিকেল চারা রোপণের সময় মাটি নিচের দিকে ভালোভাবে চাপ দিতে হবে যাতে চারাটি শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।

ভিয়েতনাম নারিকেল গাছে সার ও সেচ পদ্ধতিঃ

চারা রোপণের পর প্রতি ৩ মাস পর পর নিম্নলিখিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

চারার গোড়া থেকে ৩০ সেমি দূরত্বে ৩০-৪০ সেমি চওড়া ও ২০ সেমি গভীর নালায় সারগুলো প্রয়োগ করতে হবে। পরের প্রতিবার চারার গোড়া থেকে আগের বারের থেকে ৫-৭ সেমি আরও দূরে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সার প্রয়োগের পর ১৫-২০ লিটার পানি দিয়ে গাছের গোড়া ভেজাতে হবে। শুকনো মৌসুমে খড় বা কচুরিপানা দিয়ে মালচিং করে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।

কিভাবে বছরের পর বছর নারিকেল চাষে সফল হবেনঃ

ক্রমিক নং উপাদান ১ম বছর ২য় বছর ৩য় বছর ৪র্থ বছর ও ঊর্ধেঃ

(১) পচাঁ গোবর (কেজি) ৩০, ৪০, ৪০, ২০.
(২) ছাই (কেজি) ৭, ১০, ৮, ৭.
(৩) কেঁচো সার (কেজি) ২, ৩, ৪, ৫.
(৪) ইউরিয়া (গ্রাম) ৬০০, ৮০০, ১০০০, ১২০০.
(৫) টিএসপি (গ্রাম) ৩০০, ৪০০,৬০০, ৮০০.
(৬) এমওপি (গ্রাম) ৬০০, ৭৫০, ১২০০, ১৪০০.
(৭) জিপসাম/ ম্যাগ নেসিয়াম (গ্রাম) ১০০, ১৫০, ১৫০, ১৫০.
(৮) বোরন (গ্রাম) ৫০,১০০, ১০০, ১০০.

বিঃদ্রঃ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ও বোরন সার ৬ মাসের ব্যবধানে বছরে ২ বার প্রয়োগ করা যাবে।

নারিকেল গাছের রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনাঃ

বাড রট/কুঁড়ি পচা: রোগের প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি লিটার পানিতে ৪ থেকে ৫ গ্রাম প্রপিনেব ও ম্যানকোজেব গ্রুপের কীটনাশক সিকিউর মিশিয়ে কুঁড়ির গোড়ায় ২১ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

নারিকেল গাছের ফল পচা রোগ কিভাবে দূর করবো?

নারিকেল গাছের ফল পচা রোগ কিভাবে দূর করবো তার উত্তর খুবই সহজ। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ম্যানকোজেব গ্রুপের রোগনাশক মিশিয়ে আক্রান্ত ফলে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

Vietnam-coconut
ভিয়েতনাম নারিকেল গাছের ছবি

নারিকেল পাতার ব্লাইট রোগ কিভাবে দূর করবো?

পরিমিত সার প্রয়োগ করলেও যথা সময়ে সেচ এবং নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে রোগের আক্রমণ কম হয়। আক্রমণ বেশি হলে প্রোপিকোনাজল গ্রুপের কীটনাশক ১৫ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে।

গণ্ডার পোকা: আক্রান্ত গাছের ছিদ্র পথে লোহার শিক ঢুকিয়ে সহজেই পোকা বের করা যায় বা মারা যায়।
ছিদ্র পথে সিরিঞ্জ দিয়ে অরগানো ফসফরাস গ্রুপের কীটনাশক প্রবেশ করালে পোকা মারা যাবে।

নারিকেলের মাইট: গাছ পরিষ্কার করে প্রোপারজাইট গ্রুপের সানমেকটিন/ভার্টিমেক/ওমাইট ৪.৫ মিলি থেকে ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
এছাড়া নারিকেলের ৩/৪ টি তাজা শিকড় কেটে সানমেকটিন/ভার্টিমেক/ওমাইট মিশ্রিত বোতলে ডুবিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে রেখে দিলেও কার্যকরভাবে নারিকেলের মাইট দমন করা যায়।

ভিয়েতনামি নারিকেল গাছ কোথায় পাওয়া যায়ঃ

ভিয়েতনামি নারিকেল গাছ পাওয়ার জন্য মহেশখালী দ্বীপে ভ্রাম্যমাণ কৃষি তথ্য ও সেবা কেন্দ্র নামের নার্সারিতে যোগাযোগ করুন।

মোবাইলঃ ০১৮৪৯-৪৭৮৫৯৫

আজকের পোস্টটি আপনাদের কতটুকু উপকারে আসলো তা নিচের কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। এবং অবশ্যই আপনার কোন প্রজাতির নারিকেল গাছ পছন্দ তা আমাদের জানাবেন। ধন্যবাদ।

Related News

3 COMMENTS

  1. আমি ভারতের পঃবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুরে আপনাদের সহযোগিতা ও মতামত কিভাবে পাবো।

  2. আমি দুই জাতের একটি একটি চারা চাঁদ বাগানের লাগাতে চাই।
    সহযোগিতা ও পরামর্শ চাই।
    কাজী রুহুল আমিন,ঢাকা
    ০১৭৩০৭১৩২০২ / ০১৮১৯৪৮৪২৮৮

Comments are closed.

- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!