Saturday, November 2, 2024
HomeEducationস্বজাত্যবোধ ও ভিন্ন মতাদর্শের বিবাদ

স্বজাত্যবোধ ও ভিন্ন মতাদর্শের বিবাদ

আমরা জন্মগত ভাবে নিজেকে সঠিক এবং সেরা ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। যার পেছনের মূল কারণ হচ্ছে সাধারণত আমরা নিজের সংস্কৃতি এবং নিজের জীবনযাত্রার পদ্ধতি কে সেরা মনে করি, এটাই মানুষের স্বজাতিকেন্দ্রিকতা। মানুষ একে অপর নিজের সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চায়, কারণ সংস্কৃতি দিয়ে আধিপত্য তৈরী করা যায়। ফলে তৈরী হয় বিশ্বাস ও মতাদর্শের বিবাদ। সমাজবিজ্ঞানী “স্প্রেডলে এবং ম্যাকার্দি (Spadley and Macardi)” বলেন “স্বজাত্যবোধ হচ্ছে বিশ্বাস এবং অনুভূতির একটি মিশ্র অবস্থা যা তার নিজের জীবনকে অন্যান্যদের তুলনায় কাঙ্ক্ষিত এবং সঠিক মনে করে।”

অথচ আমরা কেউ একবারও ভাবিনা স্বজাত্যবোধ সবচেয়ে বড় পক্ষপাত। কেননা,আমি দুই চোখে যেভাবে আকাশ নীল দেখি একই ভাবে অপরজনের দু’চোখে তাকেও যে একই নীল আকাশ দেখে একই রুচি তৈরী করতে হবে এমন কোনও কথা নেই।সাধারণত আমরা আমাদের পরিবার এবং শিশুকাল থেকে যে সমাজে বসবাস শুরু করি,আমরা সেই সমাজ থেকে রীতিনীতি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জনকরি। অর্থাৎ কিছু জিনিস আমাদের পরিবার আমাদের শেখায় আর কিছু জিনিস আমরা দেখাদেখি অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে এক ধরনের মতাদর্শ অনুভব করি।

অর্থাৎ, মতাদর্শ আমাদের ও আমাদের পরিবারের এবং বাসকরা সেই সমাজ কেন্দ্রিক আবর্তিত হয়। তাই মতাদর্শ ভিন্ন ভিন্ন সমাজের মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে সবার চিন্তাভাবনা এক হবে এমন কোনো কথা নেই।কিন্তু স্বভাবত আমরা নিজের জায়গা থেকে সবাইকে একই রকম দেখতে চায়, এতে গন্ডগোল।কেননা,এক একটি সমাজ ব্যবস্থায় এক এক ধরণের সমাজকাঠামো।ভিন্ন ভিন্ন সমাজকাঠামোতে আমাদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। ফলে যে বিষয়কে, আমার সমাজ আমাকে রাইট বা সঠিক নির্বাচন করতে শেখায়, একই বিষয়ে আরেকটি সমাজের মানুষকে রাইট বা সঠিক নির্বাচন বলতে শেখায় কিনা সন্দেহ।কারণ,সেই সমাজের আলাদা আরেকটি রাইট বা সঠিক বলার জায়গা থাকতে পারে। তা মোটেও দোষের নয়। এটাই ভিন্ন সমাজের সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা।আমরা অনেকসময় নিজেকে জাহির করতে গিয়ে নিরপেক্ষ ও যুক্তি দেখিয়ে বলার সময় বলি কিন্তু মাঠ পর্যায়ে আমাদের কাজের প্রতিফলন ঠিক একই ভাবে আবারও পক্ষপাতের ভিতর দিয়ে নিজের মতাদর্শকে শুধু সঠিক বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

ফলে বার বার আরেকজনের ভিন্ন মতাদর্শ আমাদের কাছে নেহায়েত অযৌক্তিক ও মূর্খতা মনে হয়। আমরা নিজেকে জ্ঞানী তকমা দিতে অভ্যস্ত। কারণ চায়েরকাপে চুমুক দেওয়া তালে তালে যদি অপর মানুষটি আমাদের জ্ঞানী সম্বোধন করে আমরা অতি সহজে আমরা থাকে শিষ্য ভাবতে শুরুকরি। আমরা সবসময় নিজেকে সক্রেটিস ট্যাগ দিতে অভ্যস্ত,কারণ যায়হোক সমাজে জ্ঞানী তকমা পাওয়ার প্রতিযোগিতায় আমরা সবাই জিততে চায়। কিন্তু আলাদা আলাদা সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের পার্থক্য দিয়ে আমরা কিভাবে জ্ঞানকে মাপকাঠিতে হিসাব করি এটাই তো আমাদের চরম সংস্কৃতির আগ্রাসন।

আসলেই কি আমরা সবাই রাইট বা সঠিক? আসলেই কি আমরা নিজেরা সবচেয়ে ভালো টা বুঝি? আসলেই কি আমাদের নিজের মতাদর্শ তে কোন ভুল নেই।আসলেই কি আমরা স্বভাবত জ্ঞানী?

যদি এমনটা নাই হয়ে থাকে, তাহলে নিজের মতাদর্শ, অভ্যাসকে কিভাবে এতো সঠিক অথবা সুপিরিয়র ভাবেন।

লেখকঃ

আর.এইচ.রাকিব

শিক্ষার্থী,নৃবিজ্ঞান বিভাগ,

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Related News
- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!