মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রভাবে মার্চের পর থেকে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।বন্ধের একবছর পেরিয়ে গেলেও খুলেনি কোনো প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানগুলো কষ্টের সাথে সময় পার করতেছে।অনেকেই পরিবারের বুঝা হয়ে গেছে। সবার বরনপোষন দেওয়া পিতা-মাতারা হিমশিম খাচ্ছে।যার কারণে অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছাত্রদের উপরে পড়েছে পরিবারের চাপ। সে চাপ মাথায় নিয়ে অনেকেই ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন কর্মস্থানে। হয়তো তারা আর নাও যেতে পারে ক্যাম্পাসে। আর দেখা নাও হতে পারে সকলের সাথে। আগের মতো সবাই একসাথে বসে ক্লাস করতে পারবে না অনেক নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা। এই বৈষ্যিক মহামারি কেড়ে নিয়েছে অনেক পরিবারের সদস্যদের, হারিয়েছে তাদের আদরের সন্তান স্বামী ও স্বজনদের। এই মহামারিতে অনেক মেয়েদের বসতে হয়ছে বিবাহ আবদ্ধে।
মানুষের জীবনের মধুর সময় বলা হয় ছাত্র জীবনকে। আর ছাত্র জীবনের সবচেয়ে সেরা সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয় কলেজে অধ্যয়নের সময়টাকে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে অনেক কষ্ট, ত্যাগের পরে অর্জন করে নিতে হয় নিজের কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসন। কারও ঠিকানা হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (DU), কারও ঠিকানা হয় প্রাচ্যের কেমব্রিজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে(RU) কারো ঠিকানা হয় সাংস্কৃতিক নগর সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে(JU) কিংবা কারো ঠিকানা হয় বঙ্গবন্ধুর পুণ্যভূমি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(BMRSTU) ও কারও ঠিকানা হয় মহেশখালী ডিগ্রি কলেজে।
ক্যাম্পাসে প্রথম কয়েক দিন ক্লাস করেই তৈরি হয়ে যায় বন্ধুদের এক বিশাল সার্কেল। হঠাৎ করেই কিছু অচেনা-অজানা মুখ হয়ে যায় সবচেয়ে আপনজন। যাদের সাথে কাটে জীবনের অনেক সময়। সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে পাশে থাকে তারা। একটি ক্যাম্পাস প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে আবেগ আর ভালোবাসার জায়গা। ক্যাম্পাস জুড়ে থাকে কত শত স্মৃতি আর ভালোবাসা। পড়াশোনা, আড্ডা, গানবাজনা, বন্ধুদের সঙ্গে ঠাট্টা-হাসি, দুষ্টামি আর খুনসুটি। কত শত স্মৃতি বিজড়িত মুহূর্ত আছে ক্যাম্পাস জুড়ে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবন জুড়ে আনন্দের সিংহভাগ থাকে ক্যাম্পাস জীবনে। কিন্তু হঠাৎ করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত পুরো বিশ্ব। আর সেই আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বস্তরের মানুষের অন্তরে। কোথায় এর শেষ- জানা নেই কারও। আর সেই সঙ্গে বেড়ে চলছে আনুমানিক ২০ একরের বিস্তৃত প্রিয় ক্যাম্পাসের [আলমগীর ফরিদ টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ] প্রতি মায়া ও ভালোবাসার টান। নিস্তব্ধ পৃথিবীর সবকিছু। নেই কোনো আগের মতো রূপ। সব যেন অচলাবস্থায়। কেমন আছে প্রিয় ক্যাম্পাসটি? এ প্রশ্ন যেন মনের অন্তরালে ঘুরপাক খাচ্ছে বেলা-অবেলায়। প্রিয় ক্যাম্পাসের সব স্মৃতি যেন সবাইকে কাতর করে তুলছে।
ছোট ছোট কিছু টুকরা গল্পে বাধা, এলোমেলো কিছু স্মৃতিতে সাজানো কলেজের দিনগুলো। আর এসব স্মৃতির পুরোটাই জুড়ে থাকে প্রিয় বন্ধুরা। কলেজের সবচেয়ে আবেগের জায়গা দখল করে রাখে এই প্রিয় বন্ধুরাই। তবে এত বৈচিত্র্য থাকার পরও বন্ধুদের মধ্যে আবেগ ও ভালোবাসার কমতি থাকে না।
কোভিড-১৯ প্রকোপে পুরো পৃথিবীর মতো প্রিয় স্বদেশও আজ বিধ্বস্ত। সেই ধারাবাহিকতায় প্রিয় ক্যাম্পাস আজ এক বছর ধরে বন্ধ।চারপাশে ধান ক্ষেতের অপরূপ সাজে আলমগীর ফরিদ টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ ক্যাম্পাস এক নতুন রূপ ধারণ করেছে। রঙিন ক্যাম্পাস আজ মলিন, প্রাণহীন। প্রিয় বন্ধুরাও কর্মজীবনে পার করছে সময়। কেউ আর আড্ডার আসর জমায় না সবাই যার যার মত করে ব্যস্থ হয়ে পড়েছে।
শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকত গোটা ক্যাম্পাস(campus)। মনের আনন্দে ছবি তোলা। শিক্ষার্থীদের হৈ-হুল্লোড় করে আড্ড়া টাও এখন আর চোখে পড়ে না। বইয়ের পৃষ্ঠায় হারিয়ে যেতাম অতীতের উদ্ভট কিছু জানতে আর সাফল্য এনে দেবে, এমন প্রত্যাশা থাকে মনে। কিন্তু এখন তো আর এমন হয় না। আজ সব যেন স্মৃতি।কলেজের প্রতিটি কক্ষ ও আবাসিক স্থান যেন আজ কীটপতঙ্গের আবাসস্থল। ধুলাবালিতে একাকার পড়ার টেবিল আর বিছানা।
নীরবে মুখর পুরো ক্যাম্পাস। হয়তো কলেজের বাসগুলোর সিটের ওপর পড়ে আছে ধুলোবালির স্তূপ আর জমে আছে মরীচিকা। তবুও ফিরে যেতে চায় যে এই মন প্রিয় ক্যাম্পাসে। আর প্রাণ খুলে বলতে চাই- আসবে কবে ফিরে পৃথিবী আগের রূপে।
সবাই মিস করছে প্রিয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলোকে। ক্যাম্পাসের কতশত স্মৃতির অন্তরালে রয়েছে কত ভালোবাসা তা এখন ভাবাচ্ছে। আজ এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন- কবে খুলবে প্রিয় ক্যাম্পাস। কর্ম জীবনের ব্যস্ততা থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনছে সবাই। হয়তো আর দেখা হবে না অনেক প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে, নতুন এক সময়ের সাথে, নতুন পরিবেশে।
[…] […]