বাংলাদেশের দুর্যোগ প্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে মহেশখালী অন্যতম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ক্ষত শুকিয়ে ওঠার আগেই দরজায় কড়া নাড়ছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ ও জিও ব্যাগের উপর দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। এতে প্লাবিত হয় মাতারবাড়ীসহ মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকা।
গৃহহীন হয়ে পড়ে অনেকে। সম্মুখীন হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির। তবে এর অভিযোগের তীর অরক্ষিত বেড়িবাঁধের দিকে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি করলেও এখনো গড়ে ওঠেনি টেকসই বেড়িবাঁধ।
জানা যায়, ১৯৮৫ সালে তৎকালীন চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের আপ্রাণ চেষ্টায় মাতারবাড়ীতে বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়। পরবর্তীতে এটির ভাঙ্গন ধরলে ২০০১ সালের দিকে নতুন করে বেড়িবাঁধের সংস্কার করা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর মাতারবাড়ীর পশ্চিমের বেড়িবাঁধ মেরামত ও সংস্কার করা হয়। কিন্তু তদারকির অভাব এবং দুর্নীতির কারণে কোন লাভ নয় নাই। সংস্কারের পেছনে শত শত কোটি টাকা সরকার খরচ করলেও মিলছেনা কোন সফলতা। যেন যে লাউ সে কদু।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জোয়ার-ভাটার বৃত্ত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না মহেশখালী মাতারবাড়ীর ৮০ হাজার মানুষ। প্রান্তিক জনপদ মাতারবাড়ি পশ্চিমের প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বাতাসের তীব্রতার কারণে সমুদ্র উত্তাল। সমুদ্রে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট বৃদ্ধি পাবার কারণে বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ ও জিও ব্যাগের উপর দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি।
পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত পরিবার, মাথা গোঁজানোর একমাত্র সম্বল কুঁড়ে ঘরটা হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। মাতারবাড়ীর প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বেড়িবাঁধ যথাযথ সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে ভাঙ্গন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতার কারনে অস্তিত্ব সংকটেও পড়েছে মাতারবাড়ী ও ধলঘাটার মানুষ।
স্থানীয়রা বলেন , গত দুইযুগ ধরে বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ায় প্রায়, ৩ কিলোমিটার সাগরে বিলীন হয়ে যায়। জোয়ারের পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে সাগরের লবণাক্ত পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে ঘুম হারাম হয়ে যায়। এ অবস্থায় বিগত কয়েকটি ভয়াবহ বন্যায় মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়। বেড়িবাঁধের বিলীন অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল। অনেকে মাথা গোছার শেষ সম্বল ছোট কুঁড়ে ঘরটা হারিয়ে পেলেন। এছাড়া গ্রামীণ অবকাঠামো, পুকুর, বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা শায়ের মুহাম্মদ জানান, বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হয়েছে শত শত পরিবার। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট। মাথা গোঁজানোর একমাত্র সম্বল কুঁড়ে ঘরটা জোয়ারের পানি গ্রাস করে নিয়েছে, জানিনা কোথায় গিয়ে রাত কাটাই?আমরা ত্রাণ চাইনা, স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই।
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জি এম ছমি উদ্দিন বলেন, মাতারবাড়ী টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকার কারণে মাতারবাড়ীর মানুষ দীর্ঘদিন ধরে কষ্টে আছে। জোয়ারের পানির সাথে যুদ্ধ করে প্রতিনিয়ত জীবন অতিবাহিত করে আসছেন। আমরা মাতারবাড়ীবাসী টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।
মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আমরা সকাল থেকে বেড়িবাঁধ এলাকায় রয়েছি। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ায় অনেক পরিবার প্লাবিত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতেছি। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছি। সাইট পাড়া এলাকার জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে এবং জোয়ারের পানিতে যাদের ক্ষতি হয়েছে তাদের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করতেছে তাদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে।