Friday, April 19, 2024
HomeNewsমোদি বিরোধী আন্দোলনঃনিহত ৫, আহত ২০০;আজ বিক্ষোভ ও কাল হরতাল

মোদি বিরোধী আন্দোলনঃনিহত ৫, আহত ২০০;আজ বিক্ষোভ ও কাল হরতাল

মোদি বিরোধী আন্দোলনঃনিহত ৫, আহত ২০০;আজ বিক্ষোভ ও কাল হরতাল এর ঘোষণা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভের সময় রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলাকায় পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে প্রতিবাদকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় হাটহাজারীতে (hefajote-islam-bangladesh) চারজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০০ জনের অধিক। ২৬ মার্চ জুমা’র নামাজের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ঘের ঘটনা ঘটেছে। ২৬ মার্চ জুমা’র নামাজের পরপরই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে। দফায় দফায় বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে সংঘর্ষ। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ শতাধিক(Half Century) মুসল্লি আহত হয়েছেন।

সূত্রে জানা যায়, জুমা’র নামাজের পর মুসল্লিরা মোদি বিরোধী স্লোগান দিয়ে মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় মুসল্লিরা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ বলে শ্লোগান দেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ‘জয় বাংলা’ বলে শ্লোগান দেন। এক পর্যায়ে পুরো এলাকায় পুলিশ সাঁজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি পুলিশ ও র‌্যাব চারদিক থেকে মসজিদ এলাকা ঘিরে ফেলে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ২৬ মার্চ জুমা’র নামাজের আগেই লাঠিসোঁটা অবস্থান নেয় যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। মুসল্লিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশ প্রথমে টিয়ারশেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়তে শুরু করে। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও পুলিশের সাথে মুসল্লিদের ওপর হামলার চালায়। প্রায় ২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলে। সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

এদিকে, সংঘর্ষের পর বায়তুল মোকাররম এলাকায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও মসজিদের ভেতরে মোদি বিরোধী পাঁচ শতাধিক মুসল্লি আটকা পড়েন। পরে আটকে পড়া মুসল্লি ও আন্দোলনকারীদের বের করতে সমঝোতা করে পুলিশ। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চলে যান। পরে মসজিদের পূর্ব গেইট গিয়ে আটকা পড়া মুসল্লিরা(hefajote-islam-bangladesh) বের হন। এ সময় আহতদেরও বের করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

সংঘর্ষ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেটে, আন্দোলনকারীরা ছয় থেকে সাতটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদের আশপাশের এলাকায় ও মসজিদের ভেতরে সংঘর্ষের ঘটনায় নিক্ষেপ করা ইটপাটকেল চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের ডিসি আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, দফায় দফায় সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়েন্ত্রণে আসে। এক পর্যায়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই আন্দোলনকারীদের বায়তুল মোকাররম ত্যাগ করতে বলা হয়। পরে আন্দোলনকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

আহতদের মধ্যে সাংবাদিক, পথচারী, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কর্মী, মুসল্লি, রিকশাচালকও রয়েছেন। ইট পাটকেল, লাঠির আঘাত, গুলিসহ বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে আহতদের শরীরে।

হাটহাজারীতে নিহত চারঃ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে গুলিতে হেফাজতে ইসলামের(hefajote-islam-bangladesh) চার কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অর্ধশত(Half Century) হেফাজত কর্মী ও সাধারণ মুসল্লি। তাদের মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ। ২৬ মার্চ জুমা’র পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে এবং বৃহস্পতিবার ঢাকার বায়তুল মোকাররমে ইসলামি দলের(hefajote-islam-bangladesh) মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে হেফাজতের কর্মী এবং মুসল্লিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে এই সংঘর্ষ হয়।

হেফাজতের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ বিনা উস্কানিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেছে। তবে পুলিশের দাবি মিছিলকারীরা থানায় হামলা করায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে। পুলিশের গুলি ও লাঠির আঘাতে আহত অন্তত ১০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের মধ্যে গুলিতে আহত চারজনকে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

তারা হলেন রবিউল ইসলাম, মেহরাজ হোসেন, জামিল উদ্দিন ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। নিহতদের মধ্যে আবদুল্লাহ ছাড়া বাকি তিনজন হাটহাজারী মাদসার ছাত্র বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রবিউলের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ, মেহরাজের বাড়ি মাদারীপুর এবং জামিলের বাড়ি হাটহাজারী এলাকায়। আবদুল্লাহ হাটহাজারীর একটি দর্জির দোকানের কর্মচারী বলে জানা গেছে। অন্য আহতদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায় তিনিও মুসল্লি হিসাবে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশের গুলিতে চার কর্মী নিহতের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের(hefajote-islam-bangladesh) কর্মীরা চমেক হাসপাতাল এলাকা, পটিয়াসহ মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। হাটহাজারীতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বাদ জুমা হাটহাজারী মাদরাসা ও আশপাশের মসজিদ থেকে সহস্রাধিক জনতার মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি প্রধান সড়কে থানা এলাকায় গেলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এসময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের গুলি ও টিয়ার সেলের জবাবে মিছিলকারীরা ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। মুসল্লিদের অভিযোগ পুলিশ মিছিলে গুলি করেছে। তাতে কমপক্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত আহতদের রিকশা ও ভ্যানে করে হাসপাতালে নিতে মুসল্লিদের ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়ায় অনেকে রক্তে ভিজে যান।

হেফাজতে ইসলামের(hefajote-islam-bangladesh) সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা উস্কানিতে গুলি করেছে। এতে ছয়জন ছাত্রসহ অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। চারজন শহীদ হয়েছেন। আরও বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সংঘর্ষে পুলিশ গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা থানা ভবনসহ কয়েকটি সরকারি ভবনে ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মিছিলকারীরা আকস্মিক থানায় ভবনে হামলা করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করেছে। কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। থানার ওসি রফিকুল আলম বলেন, ছাত্ররা থানার সামনে গিয়ে হঠাৎ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তাদের ছোঁড়া ইট-পাথরের টুকরায় থানার সামনের কাচের দরজা ভেঙে যায়। বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা থানা ছাড়াও উপজেলা ভূমি অফিস, ডাক বাংলোসহ আরও কয়েকটি সরকারি অফিসে হামলা করে ভাঙচুর করেছে।

আছরের নামাজের আগে বিক্ষুব্ধ হেফাজত(hefajote-islam-bangladesh) কর্মী ও মুসল্লিরা সড়ক অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তবে বিকেলে চারজনের মৃত্যুর সংবাদে এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে হতাহতদের দেখতে চমেক হাসপাতালে ছুটে যান হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরীসহ হেফাজতের নেতারা। এসময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নিহত চার জনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নেতাকমীরা। এসময় হেফাজত আমির তাদের চরম ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দিতে গিয়ে নিজেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, শহীদের এ রক্ত বৃথা যাবে না। হাসপাতাল এলাকায় বিক্ষোভ ঠেকাতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিহত একঃ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে আশিক (২০) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত আশিক জেলা শহরের দাতিয়ারার সাগর মিয়ার ছেলে। এর আগে বিকেলে জেলা শহরের কাউতুলীতে মাদরাসা ছাত্রদের বিক্ষোভে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে মাদরাসা ছাত্ররা হাসপাতাল থেকে নিহতের লাশ নিয়ে শহরের প্রধান সড়কে মিছিল বের করেন।
এরআগে বিকেল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসা ও জামিয়া সিরাজুল উলুম মাদরাসার ছাত্ররা। বিকেল ৪টার দিকে তারা রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তাদের দখলে নেন। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি আব্দুর রহিম।

আজ বিক্ষোভ কাল হরতালঃ এদিকে মোদি বিরোধী আন্দোলনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আজ ২৭ মার্চ (শনিবার) সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও ২৮ মার্চ (রবিবার) সকাল সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে মোদি বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী প্রেরিত এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

Related News

2 COMMENTS

  1. […] ও মহেশখালীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি মোদি বিরোধী আন্দোলনঃনিহত ৫, আহত ২০০;আজ… ধলঘাটাকে হারিয়ে কাবাডি লীগ শিরোপা […]

Comments are closed.

- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!