ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে গত ২৬ মার্চ অনুষ্ঠিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নির্বিচারে গুলি করে নিরীহ ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে শহীদ ও আহত করার প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহেশখালী’র রাজপথ নিজেদের দখলে নিয়ে কোনো প্রকার সংঘাত-সংঘর্ষ, সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ(Hefajat Islam Bangladesh) ও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
২৬ মার্চ (জুমাবার) জাতীয় মসজিদ বাইতু মোকাররম, হাটহাজারী, বি-বাড়িয়া, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত তাওহিদী ছাত্র-জনতাকে শহীদ ও আহত করার প্রতিবাদে ২৮ মার্চ (রবিবার) এ হরতাল পালন করা হয়।
২৮ মার্চ (রবিবার) ফজরের নামাজের পরপরই রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে, ব্যারিকেড দিয়ে রাজপথ নিজেদের দখলে দখল নেয় হেফাজত(Hefajat Islam Bangladesh) ও ইসলামী আন্দোলন’র নেতাকর্মীরা।
ফজরের নামাজ পর নতুন বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে মিছিল বের করে নতুন বাজার থেকে মিয়াজির পাড়া পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে তারা রাস্তায় আন্দোলন করতে থাকে।
পরে বড় মহেশখালী’র বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ জণগণ জনতা থেকে শুরু করে সর্বসাধারণ তাদের বিক্ষোভে যোগ দেন। বিক্ষোভ মিছিল টি নতুন বাজার থেকে গোরকঘাটা গিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন অলিগলি প্রদক্ষিণ করে গোরকঘাটা চৌরাস্তায় চৌরাস্তার মোড়ে অবস্থান নেন। এসময় উপস্থিত সর্বস্তরের তৌহিদী জনতা রাস্তায় বসে পড়েন।
পরে সকাল ১০ টার দিকে বড় মহেশখালী শুকরিয়া পাড়া, বড় ডেইল, মুন্সির ডেইল, ফকিরা ঘোনা, জগিরা ঘোনা, মধুয়ার ডেইল সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এক বিশাল মিছিল গোরকঘাটায় অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দেন।
হেফাজতে ইসলাম ইসলাম বাংলাদেশ মহেশখালী উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হেলাল উদ্দিন’র নেতৃত্বে হরতাল ও বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বড় মহেশখালী মুসলিম মুসলিম ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, ফকিরা ঘোনা নুরুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মোকাররম বিন কবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ – মহেশখালী উপজেলা দক্ষিণ শাখার সভাপতি হাফেজ মাওলানা সাদেক মোস্তফা জসিম, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শামদুদ্দোহা ফারুকী, সহ সভাপতি হাফেজ মাওলানা শফিউল আলম,বড় ডেইল ইসলামীয়া কওমীয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আব্দুল গফুর হেলালি, মাওলানা মোহাম্মদ জুনাইদ, মাওলানা আজিজ উল্লাহ্, মাওলানা সাখাওত উল্লাহ্, মাওলানা শামসুল আলম, মাওলানা আজিজুল হক, হাফেজ মাওলানা আব্দুল করিম, মাওলানা হেলাল উদ্দিন, মাওলানা এরশাদ উল্লাহ, মাওলানা রিদোয়ান সহ অসংখ্য আলেম,ছাত্র-যুবক সহ কয়েক হাজার সর্বস্তরের মুসলিম তৌহিদা জনতা।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ঈমানদীপ্ত স্লোগানে মহেশখালী’র রাজপথ প্রকম্পিত করে তুলেন। বড় মহেশখালী’র মিছিল টি পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পূণরায় বড় মহেশখালী নতুন বাজার চৌরাস্তার মোড়ে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হন।
এসময় বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের মত একটি অসাম্প্রাদিয়ক, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে স্বাধীনতা দিবসে মুসলিম বিদ্বেষী, কট্টর সাম্প্রদায়িক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ এবং তার আগমন কোন দেশপ্রমিক নাগরিক বরদাশত করতে পারেন না। তাই এ উগ্রবাদী কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক ব্যক্তির আগমনে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ন্যায়সঙ্গত একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। এমতাবস্থায় মুসলিম প্রধান এ দেশে গুজরাটের কসাই খ্যাত মোদী বিরোধী আন্দোলনরতদের ওপর নির্মম হামলা, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপরই নগ্ন আঘাত। স্বাধীনতা দিবসে আধিপত্যবাদমুক্ত স্বাধীনতাকামী তাওহিদী ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে শহীদ করা হলো কার স্বার্থে?
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে এ নির্মম হত্যাযজ্ঞের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান এবং শোকাহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সেই সাথে আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জোর দাবি জানান।
পথে পথে ব্যারিকেডঃ এদিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের(Hefajat Islam Bangladesh) ঘোষিত কর্মসূচি হরতাল সফল করতে নিজ নিজ এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তৌহিদী জনতা।
একদম ভোরে ফজরের নামাজের পরপরই দেখা যায় বড় মহেশখালী শুকরিয়া পাড়া, বড় ডেইল, রাস্তার মাথা, মিয়াজির পাড়া, নতুন বাজার, মধুয়ার ডেইল সহ বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ জনতা টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে হরতাল পালন করেন।
বিভিন্ন ইউনিয়নে হরতাল পালনঃ মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হরতাল পালনের খবর পাওয়া গেছে- আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য মতে, হোয়ানক ইউনিয়নের পানির ছড়া, রাজুয়ার ঘোনা, বড় ছাড়া, কালাগাজির পাড়া, কালারমার ছড়া ইউনিয়নের চিকনী পাড়া, ঝাপুয়া, ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের লম্বা ঘোনা বাজার সহ বিভিন্ন স্হানে কোনো প্রকার সংঘাত, সংঘর্ষ সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও হরতাল পালন করা হয়েছে।
দোকান ও পরিবহন মালিকদের সমর্থনঃ হেফাজতের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি হরতালকে সমর্থন জানিয়ে পুরো মহেশখালীতে কোনো পরিবহন মালিক ও চালকেরা রাস্তায় গাড়ি নামায়নি। পাশাপাশি দোকান মালিকরাও কোনো দোকানপাট খোলেনি। কিন্তু ফার্মাসি, চায়ের দোকান, ও হোটেল রেস্তোরাঁ হরতালের বাইরে ছিল।
মাঠে ছিল না সরকারি দলের কোনো নেতাকর্মীঃ এদিকে গতকাল সরকারের পক্ষ থেকে হরতাল প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের রাজপথের থাকার আহবান জানালেও মহেশখালী’র রাজপথে ছিল না কোনো সরকারি দলের নেতাকর্মীরা।
পুলিশ ছিল সতর্ক অবস্থানেঃ হরতাল পালনে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, সংঘর্ষ, সহিংসতায় না জড়ায় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে মহেশখালী থানা পুলিশ ছিল সতর্ক অবস্থানে। পৌরসভা সহ মহেশখালীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
দুপুর ২ টায় হরতাল শিথিলঃ এদিকে মহেশখালী পৌরসভা সহ তিন ইউনিয়নে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে দুপুর ২ টায় সড় থেকে ব্যারিকেড তুলে যান চলাচল স্বভাবিক করে দেন আন্দোলনকারীরা।