রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্হাপনা পরিচালক (basundhara-group-md) সায়েম সোবহান তানভীরের বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
তনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২৭ এপ্রিল (মঙ্গলবার) পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্য মহানগর হাকিম তা মঞ্জুর করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন ) জাফর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, তানভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের করা আবেদন আদালত মঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, ২৬ এপ্রিল (সোমবার) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের ১২০ নাম্বার রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের এক তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় নিহত তরূণীর বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে গুলশান থানায় এ মামলা করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (basundhara-group-md) সায়েম সোবহান তানভীরকে।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) ভোর রাত ৩টার দিকে মামলার বিষয়টি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নিশ্চিত করেন। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, রাতে মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-২৭। মামলার আসামি করা হয়েছে দেশের একটি শীর্ষ শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (basundhara-group-md) সায়েম সোবহান তানভীরকে।
নুসরাত জাহান বলেন, আমি নিজে বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলাটি করেছি। মামলাটি হয়েছে একজন বিশিষ্ট শিল্পপতির ছেলের বিরুদ্ধে। যিনি দেশের শীর্ষ স্থানীয় বসুন্ধরা গ্রুপের এম ডি।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় গুলশান ২-এর ১২০ নম্বর সড়কে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে মুনিয়ার বড় বোন দরজা বন্ধ পান। ধাক্কাধাক্কি করলেও দরজা খুলছিল না। এর কিছুক্ষণ আগে থেকে তার ফোনও বন্ধ ছিল। এরপর ফ্ল্যাট মালিকের উপস্থিতিতে মিস্ত্রি দিয়ে পুলিশ দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে।
নুসরাত জাহানের বরাত দিয়ে গুলশান জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল হাসান ফিরোজ বলেন,
মুনিয়ার সঙ্গে একজনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মুনিয়া সেখানে একাই থাকতেন। মরদেহ উদ্ধারের পর গুলশান থানার পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও মুনিয়ার ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইসগুলো জব্দ করেছে।
এদিকে রাজধানীর গুলশানে ফ্ল্যাট থেকে তরুণীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় বেরিয়ে আসছে নতুন সব তথ্য।
মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের ওই তরুণীর পরিবার কুমিল্লায় থাকত। তবে তিনি থাকতেন ঢাকায়। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করতেন ঢাকার একটি কলেজে।
উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী গুলশানের ১২০ নম্বর রোডের যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, তার ভাড়া ছিল এক লাখ টাকা। পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, বাসাটির বাড়িওয়ালার কাছ থেকে পাওয়া চুক্তিপত্র অনুযায়ী ফ্ল্যাটটি মার্চ মাসের ১ তারিখে ভাড়া নেন মুনিয়া। তিনি আরও জানান, চুক্তিপত্র অনুযায়ী অগ্রিম ২ লাখ টাকা দিয়ে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে ওই বাসায় একাই থাকতেন কলেজছাত্রী।
সুদীপ আরও জানান, মুনিয়া কুমিল্লা শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমানের মেয়ে। তার পরিবার কুমিল্লায় থাকলেও মুনিয়া একাই ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান তানভিরের সঙ্গে মোসারাত জাহানের পরিচয় ছিল। ওই ফ্ল্যাটে তার যাতায়াতের বিষয়েও তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশ আরও জানায়, শিল্পপতির ওই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মনোমালিন্যের অভিযোগ করেছেন মুনিয়ার বড় বোন। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া একটি ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে মনোমালিন্য আরও ঘনীভূত হয়।
তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার পর সোমবার রাত দেড়টার দিকে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান।
সারাদেশের যেকোনো খবর যেকোনো মুহুর্তে জানতে আমাদের সাথে থাকুন।