মহেশখালীর বড় মহেশখালীতে গত ০৩ এপ্রিল গভীর রাতে হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় মহেশখালী থানায় পৃথক তিনটি মামলা রুজু করা হয়। মামলার ইস্যুকে পুঁজি করে ১৮ এপ্রিল রাতে এক আফ্রিকা প্রবাসীকে অপহরণের পর দের লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে,হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক গত ২ এপ্রিল ঢাকার সোনারগাঁও একটি আবাসিক হোটেলে ‘কথিত স্ত্রী সহ অবরুদ্ধ’ এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে,মহেশখালীতে হেফাজতপন্হীরা হঠাৎ লাঠি মিছিল শুরু করে উপজেলার কালারমার ছড়ায় বৌদ্ধ মন্দিরে আক্রমণের চেষ্টা, বড় মহেশখালীতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং উপজেলা প্রশাসন ও থানা এলাকায় হামলা করা হয়। উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় হামলাকারীরা বাইর থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়ে উপজেলা শিক্ষা ভবন ও নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের কাঁচ ভাঙচুর করে।
এ সব ঘটনায় মহেশখালী থানা পুলিশ বাদী হয়ে দুইটি মামলা ও বড় মহেশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে।
তিনটি মামলায় নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা সহ প্রায় এক হাজার জনকে আসামি করা হয়।
ওই সব মামলায় সাথে জড়িত এজহারে উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা থাকায় গ্রেফতার আতংকে এলাকা ছাড়া বড় মহেশখালী সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ের অনেকেই। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত না অনেকের নামে মামলা ও জড়িতদের টাকার বিনিময়ে মামলা হতে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।
তবে হেফাজতের ব্যানারে জামায়াত-বিএনপির লোকজন এ হামলা চালিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দাবি করে আসছেন।
এদিকে একাধিক সূত্রের অভিযোগ, মিছিল, হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার পরেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত পরিবারের লোক হওয়ায় এজাহারে নাম উল্লেখ করা হয়নি অনেকের। তাদের অভিযোগ নিরীহ অনেককেই আসামি করে মামলা বাণিজ্যে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
জানা যায়, ১৮ এপ্রিল (রবিবার) রাত আনুমানিক ১১ টা ৪০ মিনিটের সময় উপজেলার ছোট মহেশখালী নলবিলা গ্রামের বাসিন্দা আফ্রিকা প্রবাসী মাওলানা শাহ্ আলম কে তাঁর শশুর বাড়ি বড় মহেশখালীস্থ মাঝের ডেইল গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা এনামের বাড়ি থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কর্তৃক অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বড় মহেশখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন জাহাঙ্গীর শিমুলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা বড় মহেশখালী মুন্সির ডেইল এলাকার সাগর, নতুন বাজার সাতঘরিয়া পাড়া এলাকার সানাউল্লাহ সেলিম, জাগিরা ঘোনা এলাকার জমির সহ একদল ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আফ্রিকা প্রবাসী মাওলানা শাহ্ আলমকে অপহরণের পর দেড় লক্ষ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার।
ভুক্তভোগী শাহ্ আলমের শ্যালক মাওলানা হোজাইফ উল্লাহ জানান, ‘১৮ এপ্রিল (রবিবার) রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে বাড়ির দরজায় কড়া নেড়ে দরজা খুলতে বলা হয়। দরজা খোলার সাথে সাথে ১৪/১৫ জনের একটি দল বাড়িতে প্রবেশ করে। আমার মা বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে মাকে মারধরের চেষ্টা করেন তারা। ঐ সময় শিমুল, সানা উল্লাহ সেলিম, সাগর, জমির সহ বাকীরা মুখ বাঁধা অবস্থায় বাড়ির বিভিন্ন রুমে প্রবেশ করে। একটি রুম থেকে আমার বোনের জামাই মাওলানা শাহ্ আলমকে টেনেহিঁচড়ে বের করে টমটম গাড়িতে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় সোহাগ নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে একই রাতে অপহরনকারী চক্রটিকে দেড় লক্ষ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে প্রদান করার পর তারা মাওলানা শাহ আলমকে ছেড়ে দেন।
অপহরণের শিকার মাওলানা শাহ্ আলম বলেন, আমি ১৮ এপ্রিল (রবিবার) রাতে শশুর বাড়িতে অবস্থান করছিলাম, হঠাৎ রাত আনুমানিক ১১ টা ৪০ মিনিটের সময় ছাত্রলীগ নেতা শিমুলের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আমাকে অপহরণ করে টমটম গাড়ি নিয়ে একটি নির্জন স্হানে নিয়ে যায়। নিয়ে যাওয়ার পর তাঁরা আমার কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। আমি তাদের কে ৫০ হাজার বিনিময়ে আমাকে ছেড়ে দিতে বলি, কিন্তু তাঁরা রাজি না হওয়ার শেষ পর্যন্ত দেড় লক্ষ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে আমাকে ছেড়ে দেন।
অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও মামলা বাণিজ্য নিয়ে বড় মহেশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় অফিসে ভাংচুর মামলার বাদী নুরুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলার ভয় দেখিয়ে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়ের বিষয় টি আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি- এবিষয়ে আমরা তদন্ত পূর্বক সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্হা নিবো।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হালিমুর রশিদের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মহেশখালী উপজেলা শাখা অথবা ইউনিয়নের নাম দিয়ে কেউ যদি সংগঠন পরিপন্থী কোন কাজ করে থাকে, তার দ্বায়ভার সংগঠন নিবেনা।
এদিকে ঘটনা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ও জানাজানি হলেও পুলিশের কাছে এ সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই বলে জানান মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল হাই।