Thursday, April 18, 2024
HomeIslamicসূরা কাফিরূন । কোরানের আলোকে অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক।

সূরা কাফিরূন । কোরানের আলোকে অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক।

নামকরণ ও গুরুত্ব:

الكافرون শব্দটি كافر এর বহুবচন। অর্থ : কাফিররা, কাফির-দল।

প্রথম আয়াতে উল্লিখিত শব্দ থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাওয়াফ শেষে দু’রাকাত সালাতে সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস পড়তেন। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্জ হা. ১৪৮)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফজরের দুরাকাত সুন্নাতে এ সূরাদ্বয় পড়তেন। (সহীহ মুসলিম, আবূ দাঊদ হা. ১২৫৬) মাগরীবের পর দুরাকাত সুন্নাত সালাতে এ দুটি সূরা পড়ার কথাও বর্ণিত হয়েছে। (আহমাদ হা. ৪৭৬৩, সনদ সহীহ)। এছাড়া তিন রাকাতবিশিষ্ট বিতর সালাতের শেষের দু রাকাতে এ সূরাদ্বয় পাঠ করতেন।

ফারওয়া বিন নাওফেল আল-আশআরী (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন : হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাঃ)! যখন আমি বিছানায় ঘুমাতে যাব তখন কী বলব তা আমাকে শিক্ষা দিন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : তুমি সূরা কাফিরূন পড় এবং এর সমাপ্তির উপরেই ঘুমাও, কেননা তা শিরক থেকে সম্পর্ক ছিন্নকারী। (সহীহ, তিরমিযী হা. ৩৪০৩, আবূ দাঊদ হা. ৫০৫৫)

ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : এ সূরাটি হল মুশরিকরা যে-সব কাজ করে তা থেকে বিচ্ছিন্নতা ঘোষণাকারী এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রতি একনিষ্ঠতার আদেশ দানকারী সূরা। (ইবনু কাসীর)

সূরা কাফিরুন এর তাফসীর:

এ সূরা কাফির-মুশরিকরা যে-সব আমল করে তা থেকে মুক্ত ঘোষণা করার সূরা এবং এতে ইখলাসের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। الكافرون দ্বারা সব কাফির সমাজ এতে শামিল, সে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, নাস্তিক যাই হোক

যদিও এখানে বিশেষভাবে কুরাইশ কাফিরদের সম্বোধন করে বলা হয়েছে। তারা নাবী (সাঃ)-কে প্রস্তাব দিয়েছিল যে, আপনি এক বছর আমাদের প্রতিমার পূজা করেন আরেক বছর আমরা আপনার মা‘বূদের পূজা করব। তখন এ সূরা নাযিল হয়। (ফাতহুল কাদীর, ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর।)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আল্লাহ তা‘আলা শিখিয়ে দিলেন বলে দাও :

তোমরা যে-সব মূর্তি ও বাতিল মা‘বূদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না। আর আমি যে মা‘বূদের ইবাদত করি তোমরা সে মা‘বূদের ইবাদত কর না। তোমরা যার বা যাদের ইবাদত কর আমি তাদের থেকে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিণভাবে সম্পূর্ণ মুক্ত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(‏قُلْ أَفَغَيْرَ اللّٰهِ تَأْمُرُوْنِّيْٓ أَعْبُدُ أَيُّهَا الْجٰهِلُوْنَ بَلِ اللّٰهَ فَاعْبُدْ وَكُنْ مِّنَ الشّٰكِرِيْنَ)‏ “বল : ওহে মূর্খরা! তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করতে বলছ? অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদত কর ও কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও।” (সূরা যুমার ৩৯ : ৬৪, ৬৬)

সুতরাং কখনও মাসজিদে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত আবার কখনও মন্দিরে পূজো ইত্যাদি আচরণ ইসলাম বরদাশত করে না বরং সর্বদা এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে হবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(اَلَا لِلہِ الدِّیْنُ الْخَالِصُﺚ وَالَّذِیْنَ اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِھ۪ٓ اَوْلِیَا۬ئَﺭ مَا نَعْبُدُھُمْ اِلَّا لِیُقَرِّبُوْنَآ اِلَی اللہِ زُلْفٰیﺚ اِنَّ اللہَ یَحْکُمُ بَیْنَھُمْ فِیْمَا ھُمْ فِیْھِ یَخْتَلِفُوْنَﹽ اِنَّ اللہَ لَا یَھْدِیْ مَنْ ھُوَ کٰذِبٌ کَفَّارٌ‏)‏ “জেনে রেখ, দৃঢ় আস্থার সাথে বিশুদ্ধ ‘ইবাদত একমাত্র আল্লাহরই জন্য। আর যারা আল্লাহকে ছেড়ে অপরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে এবং বলে যে, আমরা তো এদের উপাসনা এজন্য করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন সে বিষয়ে, যে বিষয়ে তারা নিজেদের মধ্যে দ্বিমত করেছে। আল্লাহ তো তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না, যে মিথ্যাবাদী কাফির।” (সূরা যুমার ৩৯: ৩)

(لَآ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ) এ আয়াতটি দ্বিতীয়বার নিয়ে আসার চারটি কারণ বর্ণনা করা হয়েছে:

১. প্রথম বাক্যে মা‘বূদ আর দ্বিতীয় বাক্যে ইবাদতের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

২. প্রথম বাক্যে বর্তমান আর দ্বিতীয় বাক্যে ভবিষ্যত বুঝানো হয়েছে। এ কথা ইমাম বুখারীও বলেছেন।

৩. প্রথম বাক্যের তাকীদস্বরূপ দ্বিতীয় বাক্যের অবতারণা করা হয়েছে।

৪. আরবি ব্যাকরণ অনুপাতে প্রথম বাক্য ক্রিয়াবাচক আর দ্বিতীয় বাক্য নামবাচক। অর্থাৎ আমি আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করি না এবং আমার নিকট থেকে কেউ এরূপ আশাও করতে পারে না। এ কথাটি ইমাম ইবনু তাইমিয়াহও সমর্থন করেন। (ইবনু কাসীর)

আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন :

এরূপ কষ্টকল্পনার কোন প্রয়োজন নেই। যেহেতু তাকীদের জন্য একই বাক্য পুনরাবৃত্তি আরবি ভাষায় সাধারণ রীতি। এরূপ সূরা মুরসালাতে ও সূরা আর রহমানেও ব্যবহার করা হয়েছে। (তাফসীর ফাতহুল কাদীর, অত্র আয়াতের তাফসীর।)

এ আয়াত তাদের জন্য বড় শিক্ষা যারা ইসলামের সাথে অন্য তন্ত্র বা মতবাদকে সমন্বয় করে ইসলামকে মানতে চায়। অপারগতার দোহাই দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে ইসলাম মানা আর কিছু ক্ষেত্রে তাগুতকে মানা এটা তৎকালীন মুশরিকদের আচরণ। অতএব তাগুতের সাথে আপোষ করে কোন দিন তাওহীদের ওপর বহাল থাকা যায় না।

(لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ) এর তাফসীর প্রসঙ্গে ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: এ বাক্যটি তেমন যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে: (وَإِنْ كَذَّبُوْكَ فَقُلْ لِّيْ عَمَلِيْ وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ ج أَنْتُمْ بَرِيْ۬ئُوْنَ مِمَّآ أَعْمَلُ وَأَنَا بَرِيْءٌ مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ)‏

“এবং তারা যদি তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তবে তুমি বল: ‎ ‘আমার কর্ম আমার এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের জন্য। আমি যা করি সে বিষয়ে তোমরা দায়মুক্ত এবং তোমরা যা কর‎ সে বিষয়ে আমিও দায়মুক্ত।’ (সূরা ইউনুস ১০: ৪১)

সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আগমনের পর কোন ব্যক্তি ইসলাম মেনে না নিলে সে জাহান্নামে যাক আর যাই হোক সেজন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দায়ী থাকবেন না।

ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন :

এখানে তাদের দীন বলতে মুশরিকদের কুফরীকে বুঝানো হয়েছে আর আমাদের দীন বলতে ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। এখানে دِيْنِ বলা হয়েছে ديني বলা হয়নি, কারণ এ সূরার সব কয়টি আয়াত نون বিশিষ্ট, তাই শেষ অক্ষরের ى অক্ষরটি বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে। যেমন فهو يهدين এ আয়াত থেকে نون বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে। (সহীহ বুখারী)

অত্র আয়াত দ্বারা অনেকে ধর্মনিরপেক্ষতার সুযোগ খুঁজে থাকেন। মূলত এখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে কাফির-মুশরিকরা যদি ইসলাম মেনে না নেয় তাহলে তাদের ধর্ম তারা পালন করুক, আর তোমরা ইসলামের বিধিবিধান যথাযথভাবে পালন করতে থাক। কাফিররা যেমন তাদের ধর্ম বর্জন করেনি তেমনি তোমরাও ইসলামের কোন বিধি-বিধান লংঘন করবেনা।

সুতরাং এ আয়াত এ নির্দেশ দেয় না, কখনও ইসলাম মানব আর প্রয়োজন হলে মন্দিরে যাব আবার অসাম্প্রদায়িকতার দোহাই দিয়ে গীর্জায় যাব। বরং সকল ধর্ম বর্জন করে ইসলাম মেনে চলতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।

এ সূরাগুলো যেমন সূরা ফাতিহা, কদর, কাফিরূন, নাসর, ইখলাস, ফালাক ও নাস এ সাতটি সূরা বিশেষভাবে পাঠ করে চারটি ‘কুল’ সূরার প্রতিটি ১ লক্ষবার পড়ে মৃতের নামে বখশে দেওয়া বিদআত। যাকে এদেশে কুলখানী বলা হয়। এগুলো একশ্রেণির নামধারী ধর্মব্যবসায়ী আলেম তৈরি করেছে যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাহ পরিপন্থী।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. কাফির-মুশরিকদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত এ সূরা সে শিক্ষাই প্রদান করে।

২. বাতিলের সাথে কখনও আপোষ করা যাবে না।

৩. ‘ধর্ম যার যার, অনুষ্ঠান সবার’ একটি শিরকি ও কুফরী মতবাদ।

[Reference: Tafsir Fathul Mazid]

Related News
- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!