কৃষি ডেস্কঃ
দেশে সবচেয়ে সরু-চিকন চালের ধান উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) BINA প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাকিনা খানম।
বোরো মৌসুমে সব ধরনের জমিতে চাষাবাদ উপযোগী বিনা ধান-২৫ নামের নতুন এই জাতটি অবমুক্তের জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
জাতীয় বীজ বোর্ড ছাড়পত্র অনুমোদন দিলে আগামী ১৮ অক্টোবর বা তার কিছু দিনের মধ্যেই ধানটি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা আসছে বলে জানা গেছে।
বিনা ধান-২৫ এর উদ্ভাবক ড. সাকিনা খানম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, বাংলাদেশে যতগুলো ধান আছে, বিনা-২৫ সবচেয়ে সরু-চিকন এবং ভাত খেতে সুস্বাদু। ফলনও ভালো, প্রতি হেক্টরে ৮.৬৭ টন পর্যন্ত উৎপাদন হবে। এই ধানের জীবনকাল ১৪৫ দিন। এই ধানের চাল সবচেয়ে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির। এটি রফতানিযোগ্য, তাই উচ্চমূল্যের। এতে কৃষক ও দেশ লাভবান হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ১৮ অক্টোবর দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে শেখ রাসেল দিবস পালিত হবে। গত ৩ অক্টোবর কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলামের সভাপতিত্বে দিবসটি পালনের জন্য এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কৃষি মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থা ও অধিদফতরের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন পালনের যাবতীয় প্রস্তুতি ও নির্দেশনা দেয়া হয়। এই সভায় নতুন উদ্ভাবিত বিনা ধান-২৫ জাতের ধানের নামটি ‘শেখ রাসেল ধানের জাত’ নামকরণের প্রস্তাবনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
শেখ রাসেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ড. সাকিনা খানম উদ্ভাবিত নতুন জাত বিনা-২৫; যা পরিবর্তিত নাম ‘শেখ রাসেল ধান’ আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
পরমাণু কৃষিবিজ্ঞানী ড. সাকিনা খানম নতুন জাত বিনা ধান-২৫ উদ্ভাবন প্রসঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদকের সাথে। এই জাতটি খুব শিগগিরই অবমুক্ত হবে। বিনা ধান-২৫, এটাই তার প্রথম উদ্ভাবন। তাই তিনি খুবই খুশি। বিশেষ করে তার আবিষ্কৃত ধানের নাম শেখ রাসেল ধান রাখা হচ্ছে, এমন খবরে তিনি উচ্ছ্বসিত।
ড. সাকিনা জানান, ব্রি ধান-২৯ কে জাপান থেকে কার্ব আয়ন বীমের মাধ্যমে রেডিয়েশন দেয়া হয়। বাংলাদেশে এই ধানের সাথে ব্রি ধান-৫০ এর তুলনা করা যেতে পারে। তবে ফলনের দিক থেকে ২০ শতাংশ বেশি হবে। জীবনকাল ১৪২ দিন। এটা বোরো মৌসুমের ধান। এই ধানটি দেশের সব এলাকায় চাষের উপযোগী।
এই ধানের উৎপাদন সর্বোচ্চ হবে কি না জানতে চাইলে বিনার এই বিজ্ঞানী বলেন, দেশে কিছু ধান আছে মোটা, উৎপাদন কিছুটা বেশি। কিন্তু জীবনকাল বেশি। এটির (বিনা ধান-২৫) জীবনকাল কম হওয়া একই জমিতে কৃষক সহজেই বছরে ৩-৪টি ফসল আবাদ করতে পারবে। যেখানে বোরো অন্যান্য ধানের গড় জীবনকাল ১৫০-১৬০ দিন। সেদিক থেকে ১০-১৫ দিন আগেই কৃষক এই ধান কাটতে পারবে। ফলে এই ধান ঘরে তোলার পর অন্য ফসল করতে পারবে। তারা লাভবান হবে। বিনা ধান-২৫ ধান দেশের সব মাটিতেই চাষ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত বোরো মৌসুমে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির তত্ত্বাবধানে দেশের ১০টি অঞ্চলে ট্রায়াল দেয়া হয়েছিল। এতে সর্বোচ্চ ফলন দেখা গেছে প্রতি হেক্টরে ৮.৭০ টন। গড়ফলন ৭.৬৪ টন। এই ধানের আরো বৈশিষ্ট্য হলো ধান পাকা পর্যন্ত পাতাগুলো সবুজ থাকে।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিএআরসির (BARC) টেকনিক্যাল কমিটির ইনব্রিড ধানের প্রস্তাবিত জাত মূল্যায়নের একটি মিটিং হয়েছে। সেখানে এটা জাত হিসেবে নিবন্ধনের জন্য সুপারিশকৃত হয়েছে; যা শিগগিরই জাতীয় বীজ বোর্ড (এনএসবি) কর্তৃক নিবন্ধিত হবে।
এ বিষয়ে বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, শেখ রাসেল দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি বৈঠকে একজন অফিসার প্রস্তাব দিলেন যে, আমরা যেভাবে ব্রি ধান-১০০কে বঙ্গবন্ধু ধান নামকরণ করলাম। শেখ রাসেল দিবসে তার নামে কোনো ধানের নামকরণ করা যায় কি না, করলে ভালো হয়। আমি এতে সায় দিলাম এবং বললাম যে, বোরো মৌসুমের জন্য সম্প্রতি বিনা-২৫ নামে একটি উন্নতজাতের ধান উদ্ভাবিত হয়েছে। জাতীয় বীজ বোর্ডের কারিগরি কমিটি এই ধানের ছাড়ের জন্য সুপারিশ করেছে। আমরা ‘শেখ রাসেল ধান’ নাম দিতে পারি।
তিনি বলেন, এই ধানের অবমুক্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন শুধু চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। শেখ রাসেল জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমরা বলব বিনা ধান-২৫ কে ‘শেখ রাসেল ধান’ নামকরণের ঘোষণা দেবো।
এই ধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, বোরো মৌসুমে চিকন ধানের খুব অভাব। যেগুলো আছে, সেগুলোতেও রোগবালাই দেখা দিয়েছে। আমি একজন ব্রিডার হিসেবে বলব, ১০, ১৫, ২০ বছর পর পর রি-জেনারেট করে বা নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য নতুন নতুন ধানের জাত ১০-১৫ বছর আনা দরকার।
এবিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ বিভাগের মহাপরিচালক বলাই কৃষ্ণ হাজরা বলেন, জাতীয় বীজ বোর্ডে এখনো নতুন জাতটির অনুমোদন দেয়া হয়নি। পরবর্তী বৈঠকও এখনো ঠিক হয়নি। সুতরাং ১৮ অক্টোবরের আগে বৈঠক হবে কি না, আগামী সপ্তাহে এটা বলা যাবে।