Wednesday, March 27, 2024
HomeNewsশামীমা আখতার শামীম মহেশখালীর প্রথম ও একমাত্র জেলা অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত

শামীমা আখতার শামীম মহেশখালীর প্রথম ও একমাত্র জেলা অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত

a2i এর ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডরে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে ডিজিটাল আইল্যান্ড (Digital Island) মহেশখালীর প্রথম ও একমাত্র জেলা অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হয়েছেন দেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ, ডিজিটাল আইল্যান্ড (Digital Island) মহেশখালী’র পাহাড়ী সুকন্যা কুতুবজোম লাল মোহাম্মদ সিকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাবা শামীমা আখতার শামীম।

বর্তমান সরকারের ভিশন টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান বাস্তবায়নের লক্ষে শিক্ষা ব্যবস্হা ডিজিটালাইজেশনের জন্য প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এটুআই’র (a2i) এম্বাসাডর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য যেসকল মানদণ্ড প্রয়োজন তার মধ্যে তার ৫টি মানদণ্ড অর্জিত হওয়ায় তিনি জেলা এম্বাসেডর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

শিক্ষকদের সৃজনশীলতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত শিক্ষক বাতায়নে অনেক আগে থেকেই তিনি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
তিনি অন্য অ্যাম্বাসেডরদের সঙ্গে জেলা ও উপজেলায় শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন এবং গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে চলমান আইসিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন বলে জানা যায়।

শামীমা আখতার শামীম মহেশখালীর প্রথম ও একমাত্র জেলা অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত

প্রাপ্ত তথ্য মতে, শামীমা আখতার শামীম’র জন্ম দ্বীপ উপজেলা (Digital Island) মহেশখালীর পৌরসভার ০২ নং ওয়ার্ডের আমির চাঁদ পাড়া গ্রামে। ছোট বেলা থেকেই ছিলেন তুখোড় মেধাবী। শিক্ষা জীবনে মধুয়ার ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শেণি পর্যন্ত লেখাপড়ায় ১ম স্থানটি তার দখলেই থাকতো প্রতিবার।

শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও শিক্ষাকে ধারণ করে পরবর্তী ধাপে পদার্পণ করে ভর্তি হন মহেশখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। আর এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় সব বিষয়ে লেটার মার্ক পেয়ে স্টার মার্কস দখল করে অর্জন করেছিলেন মহেশখালীতে দ্বিতীয় স্হান।

উচ্চ মাধ্যমিকে মহেশখালী ডিগ্রী কলেজ থেকে অংশগ্রহণ করে- এইচএসসিতে (মেয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একমাত্র তিনি-ই ১ম শ্রেণি অর্জন করেছিলেন) ১ম শ্রেণি অর্জন করে পুরো মহেশখালীতে হয়েছিলেন দ্বিতীয়।

কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে অত্যন্ত সুনামের সাথে বিএসসি (গণিত বিষয়ে অনার্স) শেষ করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ হতে এমএসসি (গণিত বিষয়ে মাস্টার্স) তে ১ম শ্রেণি অর্জন করার মাধ্যমে পুরো চট্টগ্রাম সরকারি হতে ৯ম স্হান অধিকার করেছিলেন।

শিক্ষা জীবন শেষ করে ২০০৬ সালে প্রথম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন শামীমা আখতার শামীম। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সরাসরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এখনও পর্যন্ত মহেশখালীতেই তিনিই একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নারী প্রধান শিক্ষক।

বহু গুণে গুণান্বিত শামীম আখতার শামীম লেখাপড়ায় যেমন মেধাবী, তেমনি সংস্কৃতিপ্রেমীও। গান করা থেকে শুরু করে কবিতা লিখা, বাগান করা যেমন তাঁর শখ, তেমনি তার কবিতা আবৃত্তিতে খুঁজে পাওয়া যায় শৈলী উপস্থাপনা, আর তার বক্তৃতায় রয়েছে শ্রুতিমধুরতা। যেকারণে মাধ্যমিকে বিতার্কিক হিসেবেও স্বীকৃতি রয়েছে এই পাহাড়ী সুকন্যার।

পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে তিনি ২০০৭ সালে সিইনএড (কক্সবাজার পিটিআই) করে ১ম শ্রেনি অর্জন করেন এবং ২০১৭ সালে বিএড( চট্টগ্রাম সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ) হতে সম্পন্ন করে ১ম শ্রেণি অর্জন করেন। শুধুমাত্র গান করা, কবিতা লিখা ও আবৃত্তি, উপস্থাপনার সীমাবদ্ধ না শামীম আখতার শামীম। রয়েছে ট্রেনিং পরিচালনা, শ্রেণি পাঠদান পরিচালনা ও ক্লাস্টারভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পরিচলনার অভিজ্ঞতাও।

গণিত বিষয়ে মাস্টার ট্রেইনার, ব্রিটিশ কাউন্সিল, লিডারশীপ, বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণে পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন প্রতিবার। বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও যাবতীয় শিক্ষা সংক্রান্ত কার্যাবলীতে চৌকসতার জ্বলন্ত প্রমাণ উনার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি বছরের ফলাফল ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পারফরম্যান্স।

শুধু এখানেই শেষ না পাহাড়ী সুকন্যার গল্প- তিনি শিক্ষকতা জীবনে অর্জন করেছেন ২০১৮ সালে মহেশখালী উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা তকমা (তখন সহকারি এবং প্রধান শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচিত করা হতো)।

২০১৯ সালে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচিত হয়েছেন শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা। ২০১৯ সালে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা (শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের ম্বীকৃতি)। ২০১৯ সালের শ্রেষ্ঠ জয়িতার বিভাগীয় সম্মাননা (সেরা দশের ১ জন) সহ অনেক সম্মাননা অর্জন করেন।

উল্লেখ্য, ২০২০ এর মার্চ মাসে যখন বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, তখন সরকার শিক্ষার্থীদের পাঠদানের উপর গুরুত্বারোপ করে চালু করেন অনলাইন ক্লাস। করোনাকলীন সময় অনলাইন পাঠদানে “কক্সবাজার ডিস্ট্রিক্ট অনলাইন প্রাইমারি স্কুল এর “ঘরে বসে শিখি” আয়োজনে মহেশখালী থেকে সর্ব প্রথম অনলাইন পাঠদান তিনিই শুরু করেন।

এক যুগের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকা শামীমা আখতার শামীম মহেশখালী ট্রিবিউন কে বলেন, আমাকে এটুআই’র জেলা অ্যাম্বাসেডর হিসেবে মনোনীত করায়, আমি প্রথমে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। সাথে সাথে a2i কর্তৃপক্ষ, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি।

তাছাড়া বাবা,মা (প্রয়াত) একমাত্র বড় ভাই যার হাত ধরে জীবনের প্রথম সিঁডি চিনেছি তার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সময়ে অসময়ে যারা পাশে থেকে বিভিন্ন সময় সাহস যুগিয়েছেন (যদিও তা আমার ক্ষেত্রে হাতে গোনা কয়েকজন) তাদের প্রতি শ্রদ্ধা,ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা।

আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আজীবন কাজ করে যেতে চাই। একাজে আমার উর্ধ্বতন কর্মকতা,সহকর্মী সহ সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করি। আমি মনে করি সকলেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করলেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবো। আজীবন এই স্বীকৃতির স্বাক্ষর রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন পাহাড়ী সুকন্যা, অমায়িক, সদালাপী, হাস্যোজ্জ্বল এই ব্যক্তিত্ববান শিক্ষক। তিনি তার এ অর্জন মহেশখালীবাসীর প্রতি উৎসর্গ করেন।

Related News
- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!