Home Education Books বুক রিভিউঃ ফেরা-২

বুক রিভিউঃ ফেরা-২

1
Fera-2 Book Review
বুক-রিভিউঃ-ফেরা-২
বইয়ের নাম : ফেরা-২
লেখক : বিনতু আদিল
অনুবাদক : সাদিকা সোলতানা সাকী
বইয়ের মূল্য : ১৭২৳
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১১৯
প্রকাশক : সমকালীন প্রকাশন
❝প্রত্যেক নবজাতকই ফিতরাতের উপর জন্মলাভ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা বা মাজুসী (অগ্নিপূজারী) রূপে গড়ে তোলে।❞
-সহীহ বোখারী ও মুসলিম
ভবঘুরের ন্যায় নীড়হারা হয়ে কতকাল ঘুরবে? উদাসীন ও অস্থিরতায় আর কতকাল কাটবে? সময় যে যাচ্ছে ফুরিয়ে! তোমার রব যে তোমাকে ডাকছে তার ছায়াতলে, হেদায়েতের আলোয় উজ্জীবিত হয়ে ফিরতে হবে আপন নীড়ে!
বাবা মুসলিম (কনভার্টেড হিন্দু), মা হিন্দু, মেয়ে আধা খ্রিস্টান ও ছেলেরা আধা হিন্দু-আধা মুসলিম। এমন এক মিশ্র পরিবেশে পরিবারের সাত সদস্যদের মধ্যে পঞ্চম মনিকা ও ষষ্ঠ সদস্য নিলম।
হঠাৎ হেদায়েতের আলো যেন চমকিত করে মনিকার হৃদয় মননে। নিজের রুমের বারান্দা থেকে দেখতে পাওয়া ঐ মসজিদের মিনারটি যেন তাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে হেদায়তের দিকে। রাতের পর রাত নির্ঘুম থেকে ঐ মিনারের দিকে তাকিয়ে থাকা ও ফজরের আজানে মুয়াজ্জিনের সুমধুর ধ্বনি তার অশ্রুস্নান করিয়েছে বারংবার। হেদায়েতের অপরূপা সজ্জা তাকে সাজিয়েছে নতুন রূপে।
হেদায়েতের এই ডাকে সাড়া দিয়ে মনিকা একা যায়নি। সাথে করে নিয়ে গেছে আদরের ছোট বোন নিলমকেও। তাকেও পড়িয়েছে শাহাদাতের কালিমা। ইসলাম গ্রহণোত্তর তাদের নতুন নাম হয় যথাক্রমে আয়েশা ও মরিয়ম।
মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রেমে মাতোয়ারা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পড়ুয়া এই দুই ছোট্ট মেয়েদ্বয়কে কী না করতে হয়েছে নিজেরদের দ্বীনকে বাঁচাতে! পানকৃত ঈমানের সুধা ও নিজেদের ধারণকৃত মুসলিম নামকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হাজারো নির্যাতিত-নিপিড়ীত হতে হয়েছে এই আয়েশা ও মরিয়ম বোনদ্বয়কে!
বইয়ে হৃদয়বিদারক অংশসমূহের কিয়েদাংশ:
মারইয়াম, চল, আমরা বাড়ি থেকে পালাই।’
-কী বললে! পালিয়ে যাব? না, না, এটা হতে পারে না। তুমি ঘর ছাড়তে পারবে না, আমিও পারব না। তার চেয়ে চলো, সুবোধ বালিকার মতো আমরা আমাদের বাপ-দাদার ধর্মে ফিরে যাই।’
– না রে বোন, তোকে ফিরতে হলে আমার লাশের উপর দিয়েই ফিরতে হবে। মুসলিম হওয়ার পর আমি তোর জীবন হিন্দুদের হাতে সঁপে দিতে পারি না; এমনকি তুই চাইলেও না। আমি কিছুতেই হারামের উপর তোর মৃত্যু দেখতে পারবো না। আখিরাতে আমাদের পালনকর্তার সামনে কোন মুখে দাঁড়াবি তুই?’
বোন রে, আমার জীবনের সহযাত্রী তুই। তুই যদি এই মুহূর্তে আমার সামনে মারা যাস, তবে আমি একমুহূর্তও কালবিলম্ব না করে আমার দ্বীনের জন্য, আমার আল্লাহর জন্য এই ঘর ছেড়ে চলে যাব। আমি এখন পর্যন্ত এই ঘরে পড়ে আছি শুধু তোর জন্য। আমি জানি না আমার মঞ্জিল কোথায়?…
মায়ের নির্যাতন এতটা বেড়ে গেছে যে, মাঝে মাঝে কমলা দিদি পর্যন্ত বলে, “মা, এতটা বাড়াবাড়ি ঠিক না। তুমি সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো।
একদিন মা আমার চুলের মুঠি ধরে কাঁচি দিয়ে চুল কাটতে শুরু করলেন। প্রতিবাদ করতেই পিঠের উপর দ্রিমদ্রিম কিল-ঘুষি পড়তে লাগল। মার খেয়ে নিথর হয় পড়ে রইলাম আমি। এমন সময় ঘরে ঢুকলেন দুলাভাই। আমাকে মাটি থেকে তুলে মুখের সামনে পানি ধরলেন। এরপর বললেন, ‘বোন, তোমার তো অন্য কোথাও চলে যাওয়া উচিত।‘ তার কথাটা আমার শরীরে কাটার মতো বিঁধল। মনে হলো, অনেক আগে অনুভব করা সেই আলোটি মুহূর্তের জন্য আমার চোখের সামনে জ্বলে উঠছে। সাথে সাথে কানে ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা সাইরেন বাজতে শুরু করল। আমার চিন্তা শক্তি নিস্তেজ হয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে..!❞
এভাবে কত শত অসহ্য নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। নিজের মায়ের পদাঘাত থেকে শুরু করে আদরের ভাইয়ের পিস্তলের ভয়, আবার আপন মায়ের হাতে চুলের মুঠি কেটে দেওয়া থেকে শুরু করে হাইকোর্টের শুনানি। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি, কী না হয়েছিলো তাদের জীবনে! কিন্তু টলাতে পারেনি তাদের, কমাতে পারেনি তাদের ঈমানের জোর। সব বাঁধা-ই মহান আল্লাহ সুনিপুণভাবে পার করিয়েছেন। যখন যেখানে যাকে দরকার, মহান রব তাকে দিয়েই সেই কাজ করিয়েছেন।
অবশেষে করাচির জামিয়া বিন্নুরি ইন্টারন্যাশনাল মহিলা মাদ্রাসা-ই তাদের স্থান। যেন দুনিয়াতেই তাদের স্বর্গ, এ যেনো আপন নীড়ে ফেরা।
❝যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে অবিচল থাকবে, রব্বে পাক তার জীবনকে সহজ করে দেন।❞
মুসলিম ঘরে জন্ম না হয়েও ইসলামের প্রতি কত দরদ, কত টান, ঈমানের কত জোর! সুবহানাল্লাহ।।
আর আমরা মুসলিমের ঘরে জন্ম নিয়েও চিনতে পারলাম না ইসলামকে, বাড়াতে পারলাম না ঈমানের জোরকে।
প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর বইটি পড়া উচিৎ বলে মনে করি। বইটি যতই পড়ছিলাম ততই অশ্রুসিক্ত হচ্ছিলাম। আপনিও পড়ে দেখুননা একবার!
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েতের আলোয় উজ্জীবিত করে দ্বীন ইসলামের সঠিক দিশা দান করুন এবং দ্বীনের পথে আমরণ অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এইচ.এম.নুরুল কাদের
আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

1 COMMENT

Comments are closed.

error: Content is protected !!
Exit mobile version