Friday, April 19, 2024
HomeEducationবিশ্বসেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় চট্টগ্রামের নওশাদ

বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় চট্টগ্রামের নওশাদ

বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় চট্টগ্রামের নওশাদ

ফলিত পদার্থ বিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যাপক ডঃ নওশাদ আমিন। ২০২০ সালের গবেষণা তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সন্তান ডঃ নওশাদ। তাঁর জন্মস্থান রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা এলাকায়। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি তেনাগা ন্যাশনালে কর্মরত।

ফলিত পদার্থবিদ্যায় মালয়েশিয়ার শীর্ষ একাধিক বিজ্ঞানীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ডঃ নওশাদ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত তাঁদের একজন। তাঁর কর্মস্থল থেকে এই তালিকায় আরও ৩ জন স্থান পেয়েছেন। তালিকাটি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি। বিশেষত সৌরশক্তির গবেষক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে ডঃ নওশাদ আমিনের।

শৈশবে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন নওশাদ আমিন। পরে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর স্কলারশিপ নিয়ে জাপানে পাড়ি জমান তিনি। ১৪ বছর জাপানেই কাটান। সেখানে তড়িৎ প্রকৌশলে ডিপ্লোমার পর টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে মাস্টার্স এবং পিএইচডি অর্জন করেন।

পরে আমেরিকার সাউথ ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটিতে ফেলোশিপ পান। স্নাতক পর্যায় (১৯৯৬) থেকেই সৌর বিদ্যুতের মূল সৌরকোষ বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। ২০০৪ সালে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি তেনাগা ন্যাশনালে কর্মরত আছেন তিনি।

ডঃ নওশাদ আমিন সবুজ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা গ্রামের চিকিৎসক নুরুল আমিন চৌধুরী ও দিলারা আমিনের দ্বিতীয় সন্তান। জন্ম থেকেই নগরীর নন্দনকাননে নানাবাড়িতে বেড়ে ওঠা। বাবা প্রয়াত চিকিৎসক নুরুল আমিন স্বাধীনতা উত্তরকালে কর্ণফুলী পেপার মিলের হাসপাতালে প্রধান চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাথে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যুদ্ধের সময় আগরতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসক হিসেবে ছিলেন।

দুই ভাইয়ের মধ্যে নওশাদ কনিষ্ঠ। বড় ভাই আরশাদ আমিন বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশল থেকে ১৯৯২ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বর্তমানে কর্ণফুলী সার কারখানায় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত।

নওশাদ ভারত এবং জাপান সরকারের পূর্ণ বৃত্তি ও আমেরিকায় আংশিক টিউশন ওয়েভার লাভ করেন। তবে বাবার ইচ্ছায় জাপানের মনবুশো (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) বৃত্তি গ্রহণ করে ১৯৯০ সালের অক্টোবর থেকে ১৪ বছর জাপানে কাটান।

এরপর বছর তিনেক জাপান মটোরোলাতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মাঝে বছরখানেকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটিতে ফেলোশিপে ও গবেষণা করেন। স্নাতক পর্যায় (১৯৯৬) থেকেই সৌর বিদ্যুতের মূল সৌরকোষ বিষয়ে গবেষণা শুরু। তবে, ২০০৪ সাল থেকে নিজ সিদ্ধান্তেই ১৪ বছরের জাপানের থিতু সময়ের ইতি টেনে শিক্ষকতা পেশা নিয়ে মালয়েশিয়ার মাল্টিমিডিয়া ভার্সিটিতে যোগ দেন। তবে গবেষণার পরিবেশ না পাওয়ায় কিছুটা হতাশ ছিলেন।

এরপর ২০০৬ সালে মালয়েশিয়ার সরকারি ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ায় সিনিয়র লেকচারার পদে যোগ দিয়ে ২০০৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০১২ সালে প্রফেসর পদে পদোন্নতি পান। মূলত এখানেই ২০০৭ থেকে শুরু। গবেষণাগার তৈরি থেকে শুরু করে সৌরকোষের গবেষণার কাজ শুরু হয় দীর্ঘ বিরতির পর।

এরপর মালয়েশিয়ার সরকার ছাড়াও সৌদি আরব, কাতার ফাউন্ডেশনের গবেষণার নানা অনুদান লাভ করে দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নেন। গত ১০ বছরের মধ্যে তার গবেষণার কাজ চলেছে নানা প্রতিকূলতায়। এর মাঝেই তৈরি হয়েছে দক্ষতাসম্পন্ন অনেক ছাত্রছাত্রী ও অনুরাগী গবেষক।

২০১৮ সাল থেকে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি তেনাগা ন্যাশনালের বিশেষ আমন্ত্রণে স্ট্রাটেজিক হাইয়ার প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন।

ডঃ নওশাদ চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা (বর্তমানে চট্টগ্রামের পাথরঘাটার সতীশ বাবু লেন নিবাসী) প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যিক আমান উল্লাহ খানের বড় জামাতা। বর্তমানে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ার পাশে বাঙ্গি শহরে থাকেন ড. নওশাদ। সাথে থাকেন মা দিলারা আমিন, স্ত্রী জান্নাতুল ওয়াসুল ও তিন কন্যা নুসাইবা, যাহরা ও আয়েশা।

Related News
- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!