Thursday, March 28, 2024
HomeNewsবাবারা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, আর সন্তানসন্ততিরা করোনাযোদ্ধা!

বাবারা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, আর সন্তানসন্ততিরা করোনাযোদ্ধা!

বাবাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর সন্তানসন্ততিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ একদিন আল্লাহ চাইলে করোনামুক্ত হবে, ইনশাআল্লাহ।

এতোটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিলো। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়।

এটা মেনে নিতে হবে যে, প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী সর্বপ্রথম রাষ্ট্রেরই একজন নাগরিক। আবার সেই রাষ্ট্রটিই যদি তাঁর বাবাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনকৃত হয়, তাহলে যেনো মেঘ না চাইতেই জল। তো রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার দায়িত্বটাও স্বাভাবিকভাবে তাদের উপরই বেশি বর্তায়। এখানে নিজেকে হিরো হিসেবে উপস্থাপনের একটা বিশাল সুযোগ ছিলো। কিন্তু সেটা না হয়ে হলো ঠিক তার উল্টোটা!

করোনাযোদ্ধা হিসেবে কয়েক শ্রেনীর পেশাজীবীদের মুভমেন্ট পাশের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই মুভমেন্ট পাশ করার দায়িত্বটা পুলিশের কাঁধে। তো এখন পুলিশ কিভাবে বুঝবে যে, কে ডাক্তার-আইনজীবী আর কে নয়? নিশ্চয়ই গাউন, অ্যাপ্রোং, গাড়ি বা অন্যকিছু কখনো একজন কর্মকর্তা/কর্মচারীর পরিচিতির জন্য যথেষ্ট হতে পারে না।

যদি তাই হয়, (অ্যাপ্রোং ডাক্তারের পরিচায়ক) তাহলে হাসপাতালে রোগী বা রোগীর আত্মীয়রা যখন ভুল করে কোনো ডাক্তারকে স্যার/ম্যাডাম এর পরিবর্তে ভাই/আপু বলে সম্বোধন করে বসেন, তখন ডাক্তারেরা রেগে যান কেন?

এখন কথা হচ্ছে, অ্যাপ্রোং বা গাউনের ভেতরের ব্যক্তিটি আসল না নকল সেটা প্রমাণের জন্য তার প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত আইডি কার্ড পুলিশকে দেখানোটাই হচ্ছে যুক্তিযুক্ত। কিন্তু কেউ যদি সেটা না করে অন্যান্য অযুহাত দেখিয়ে বেড়ায়, ক্ষমতা বা বাহুবল দেখানোর চেষ্টা করে, তাহলে সেটা হতে পারে তার বড় ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ধৃষ্টতা ও প্রগলভতা

পুলিশের দায়িত্বকে যদি হয়রানি জ্ঞান করা হয় তাহলে বিষয়টি শিরে বাঁকা তাজ দিয়ে টাক ঢেকে রাখার মতই একধরনের ছলনা বা ভণ্ডামি বলা যায়। কারণ পুলিশের কাজই তো হলো জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কাজেই তারা আইডি কার্ড চাইতেই পারেন। কিন্তু কেউ যখন তাদের এই কাজে বাধা দেয় তাহলে সেটা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

শুধু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে নয়,

একজন সম্মানিত পেশাজীবী হিসেবে ডাক্তারের ব্যবহারটা আরও অধিক শালীন ও মার্জিত হওয়া উচিত ছিলো। অনুকরণীয় হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু তাকে দেখে মনে হলো, কিছুক্ষণের জন্য তিনি নিজেকেও ভুলে গিয়েছিলেন।

এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে বসে যে, এমন শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে, ভার্চু চর্চা না বাহুবল প্রদর্শনের ধৃষ্টতা? তখন সেই প্রশ্ন খন্ডন করার মতো যুক্তি কী আদৌ আছে!

ডাক্তারের উচিত ছিলো নিজের ভুল স্বীকারের সাথে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। এবং পরেরবার নির্ভুল থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া। ভুল করে ক্ষমা চাইতে লজ্জার কোনো কারণ থাকার কথা না। কিন্তু ভুল করেও বড় গলায় কথা বলাটা যে কি সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ভিডিও টা দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট যথেষ্ট ভদ্র ও মার্জিত আচরণ করেছেন। নিঃসন্দেহে তাদের এই আচরণ প্রশংসার দাবি রাখে। তারা ডাক্তারকে বারবার বুঝানোর চেষ্টা করলেন যে, তারাও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তাতে কিছুই যায় আসে না। বরং তারা নিজেদের ডিউটি করছেন।

কিন্তু ডাক্তার নিজের বাহুবল দেখিয়ে কী প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন সেটা বোধগম্য নয়।

ডাক্তারা অবশ্যই একজন সম্মুখ শ্রেণির সম্মানিত পেশাজীবী। তার উপর আবার তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক। নিজের পরিচয় প্রদানের জন্য এটা কি যথেষ্ট নয়! ডাক্তার নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে ‘আমি অমুখের মেয়ে,  অমুখ মন্ত্রী-উপমন্ত্রীর আত্মীয়’ এই কথাগুলো বলে নিঃসন্দেহে তিনি নিজেকে এবং নিজের পেশাকে ছোট করেছেন।

জাতি ও জাতীয়তার উন্নতি চাহে তো সবখানে রাজনৈতিক মেরুকরণের এই যে অপসংস্কৃতি, সেখান থেকে যথাশীঘ্র আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নয়তো একদিন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে দাঁড়িয়ে ভালো মানুষ বা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরিবর্তে রাজনৈতিক নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখবে।

-নূর চৌধুরী

Related News
- Advertisment -

Popular News

error: Content is protected !!