HomeNewsএলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস চায় ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী

এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস চায় ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী

বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে গড়ে ওঠা দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ ও দেশের প্রথম ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী মহেশখালীকে আধুনিক বিশ্বের অন্যতম রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চলমান রয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সোনাদিয়া দ্বীপে ইকো পার্ক, ধলঘাটা-মাতারবাড়িতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এবং সর্বশেষ গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের কাজ। তার আগে মহেশখালীর শাপলাপুরে বিদ্যুৎ’র সাব স্টেশন এবং মহেশখালী-আনোয়ারা-চট্রগ্রাম গ্যাস সংযোগ সরবরাহ লাইনের কাজ শেষ হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- দেশে জ্বালানির চাহিদা পূরণ ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য বর্তমান সরকার বিদেশ থেকে বিশেষায়িত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে বাজেটে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জায়গা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মহেশখালী উপজেলার ৩১ কি.মি. এবং পেকুয়া উপজেলার ১৪ কি.মি. গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন স্হাপনের জন্য ৮৫.৬৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ১৪৯.৬৫ একর ভূমি হুকুম দখল করা হয়।  সম্পূর্ণ প্রকল্প বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস, ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনর পেট্রোবাংলা ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) বাস্তবায়ন করে। উক্ত প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল- ১০৩৯.৬৭ কোটি টাকা।

কাজ শেষের পর প্রযুক্তিগত সকল সমস্যা পেরিয়ে  ২০১৮ সালের দিকে সঞ্চালন প্রক্রিয়া সার্বিকভাবে শুরু হওয়ার পর থেকে অদ্যবধি অব্যাহত রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মহেশখালীর পর্যটন এলাকা হিসেবে খ্যাত সোনাদিয়ার পশ্চিম উপকূলে প্রায় সাত কিলোমিটার গভীরে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। আর সাব স্টেশন করা হয়েছে হোয়ানক ইউনিয়নের ধলঘাট পাড়ায়।

বিদেশ থেকে মাদার ভেসেল (পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাহাজ) করে লিকুইড ন্যাচারল গ্যাস (এলএনজি) করে আমদানি করছে সরকার। Floting Storage and Re-gasification Unitn (FSRU) এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে এলএনজি কে গ্যাসে পরিণত করে সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে।

এই সোনাদিয়া থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহের জন্য স্হাপন করা হয়েছে বড় বড় পাইপ লাইন। পুরো মহেশখালীর বুক চিরে মাঝ বরাবর স্থাপিত এই পাইপ স্থাপনের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছিল জমি। এই অধিগ্রহণকৃত জমিতে ছিল- মাছের প্রজেক্ট, লবণ চাষের জমি, ধানক্ষেত, পানের বরজ, বাড়ি ঘর সহ বিভিন্ন স্হাপনা।

দেশের বৃহত্তম উন্নয়নের স্বার্থে মহেশখালীবাসী সব ত্যাগ করে এখন নিঃস্ব হয়ে পথের ভিক্ষুক। কেউ কেউ রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব বিস্তারে কমিশনমূলে অধিগ্রহনের টাকা পেলেও অনেকেই পাইনি তাদের জমির ন্যায্য মূল্য। তার পরেও মহেশখালীর শান্তি প্রিয় জনতা দেশের উন্নয়নে নিজেদের ক্ষতি মেনে নিয়ছে। তবে এত ক্ষতির বিনিময়ে ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীদের গ্যাস সংযোগ পাওয়া অগ্রাধিকার বলে মনে করেন সচেতন মহল।

হোয়ানক ইউনিয়নের ফরিদ হোসেন নামে এক স্কুল শিক্ষক আক্ষেপ করে বলেন- মহেশখালীর মানুষ গ্যাস লাইন স্হাপনে এত ত্যাগ শিকার করেও পাইনি, এবং ভবিষ্যতে পাবে কি না তাও সন্দেহ। আমাদের গ্যাস সংযোগ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

সর্বোপরি মহেশখালীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে গণমানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়- এত ক্ষতির বিনিময়ে মহেশখালীর বুকের উপর বসানো হয়েছে গ্যাস সরবরাহ লাইন। মহেশখালীকে বিভিন্ন উন্নয়নের প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে রুপান্তর করতে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়- ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীবাসী তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। ওই যে- চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় প্রবাদ আছে ” ঘরের চিন্নি পরে হার, হোছাইন্না হদ্বা লয় বেরার ” এই অবস্থা ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীর।

বড় মহেশখালী ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন বলেন- আমার জন্মভূমি মহেশখালীর সম্পদ ধ্বংস করে, বাড়ি ঘর, পানের বরজ, ধানক্ষেত শেষ করে আমার বুকের উপর দিয়ে গ্যাস যাবে আর আমি পবো না? আমরা মহেশখালীবাসী আর কত বৈষম্যের শিকার হবো? তিনি বলেন- সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদবির করে আমদের মহেশখালীবাসীর দাবি পূরণে মাননীয় সাংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সর্বোপরি সচেতন মহলের দাবি- ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীর গ্যাস সংযোগ পাওয়া ন্যায্য ও যৌক্তিক  অধিকার, আইনগত হোক বা যেভাবেই হোক ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীবাসী গ্যাস চায়

মহেশখালীর বাসিন্দারা এলএনজি গ্যাসের সংযোগ চায় কারণ দেশের লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) লাইন ও টার্মিনালগুলো তাদের দ্বীপ থেকে ভূমি কেটে নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু তারা এই প্রাকৃতিক গ্যাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দুটি এলএনজি টার্মিনাল মহেশখালীতে থাকলেও, গ্যাস আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে, যা দ্বীপের মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। 

ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী এর গ্যাস এর এই স্বপ্ন পূরণ হবে তো?

Related News

1 COMMENT

Comments are closed.

Popular News

error: Content is protected !!