HomeSports জো রুটের টেস্ট ধারাবাহিকতা ও আধিপত্য ৩৯ সেঞ্চুরি।

 জো রুটের টেস্ট ধারাবাহিকতা ও আধিপত্য ৩৯ সেঞ্চুরি।

ক্রিকেট ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে, যারা কেবল পরিসংখ্যান নয়, নিজের ধৈর্য, দৃঢ়তা এবং ক্রিকেটীয় বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যুগের পর যুগ অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। আধুনিক যুগের টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং স্তম্ভ জো রুট (Joe Root) তেমনই এক ব্যতিক্রমী নাম। তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ও ব্যাটিং আধিপত্য বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের নজর কেড়েছে।

জো রুট: শুরুটা যে ছিল নিখুঁত পরিকল্পনায় ভরা

২০১২ সালে ভারতের বিপক্ষে নাগপুরে টেস্ট অভিষেক করেছিলেন জো রুট। অভিষেকেই ৭৩ রানের একটি ধৈর্যশীল ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দেন, তিনি এসেছেন লম্বা রেসের ঘোড়া হতে।

যেখানে অনেক তরুণ ব্যাটার টেস্টে ছন্দ হারিয়ে ফেলেন,রুট বরং তার ব্যাটিং টেম্পারামেন্ট দিয়ে নিজেকে তৈরি করেছেন এক পরীক্ষিত ব্যাটিং যন্ত্রে।

টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকতার অন্য নাম: জো রুট

জো রুট
জো রুটের টেস্ট ধারাবাহিকতা ও আধিপত্য।

রুটের টেস্ট পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায় তার ধারাবাহিকতা কতটা ভয়ংকর:

  • ম্যাচ: ১৩৫+
  • রান: ১২,০০০+
  • সেঞ্চুরি: ৩০+
  • অর্ধ-শতক: ৬০+
  • গড় (Average): প্রায় ৫০

তিনি একমাত্র ইংলিশ ব্যাটার হিসেবে অ্যালিস্টার কুক এর পর দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি ১০,০০০ রানের মাইলফলক অতিক্রম করেছেন এবং ধারাবাহিকভাবে ১,০০০+ রান করেছেন একাধিক বছর।

‘ফ্যাব ফোর’-এ জায়গা পাকা করেছেন

ক্রিকেটে “Fab Four” বলতে বোঝায় — বিরাট কোহলি, কেন উইলিয়ামসন, স্টিভ স্মিথ ও রুট

এই চারজনই টেস্ট ক্রিকেটে আধিপত্য চালিয়েছেন বিগত এক দশক ধরে। তবে, অনেক বিশ্লেষকের মতে, ২০২১-২২ সময়কাল থেকে জো রুট নিজের ব্যাটিং দিয়ে বাকি তিনজনকে ছাড়িয়ে গেছেন ধারাবাহিকতায়।
বিশেষ করে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ম্লান থাকলেও, রুট একাই লড়েছেন — প্রতিকূল কন্ডিশনেও সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করেছেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় দাপট: উপমহাদেশেও ভয়ংকর রুট

অনেক ইংলিশ ব্যাটার যেখানে উপমহাদেশীয় কন্ডিশনে ধুঁকেন, রুট সেখানে বরং নিজেকে আরও বেশি শাণিত করে তুলেছেন।

ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান — প্রতিটি সফরে সেঞ্চুরির ছড়াছড়ি।
বিশেষ করে ২০২1 সালে শ্রীলঙ্কা ও ভারতে জো রুটের ধারাবাহিক শতরান ছিল চোখ ধাঁধানো।

এককথায়, রুট এখন এমন এক ব্যাটার যার খেলা দেখার জন্য কেবল ইংল্যান্ড নয়, উপমহাদেশের দর্শকরাও অপেক্ষা করে।

মানসিক দৃঢ়তা: চাপের মুখে নায়ক হয়ে ওঠা

টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো মানসিক দৃঢ়তা। সেটাই রুটকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।
শেষ দিনের পিচে, ভয়ংকর স্পিন কন্ডিশনে কিংবা স্লেজিং-এ ভরা কোন সিরিজে — রুট তার ধৈর্য ও কৌশলে ভাঙেন প্রতিপক্ষের মনোবল।

তিনি কেবল রানই করেন না, বরং প্রতিটি ইনিংস সাজান পরিকল্পনার ছকে। সেটাই তাকে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তোলে।

ব্যাটিং স্টাইল ও টেকনিক্যাল নিখুঁততা

জো রুটের ব্যাটিংয়ের প্রধান শক্তি তার ফুটওয়ার্ক, শরীরের কাছাকাছি খেলা, এবং চোখ-কান খোলা রেখে খেলা
তার স্ট্রোকপ্লে কখনোই অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক নয়, বরং পরিস্থিতি বুঝে খেলার দৃষ্টান্ত তিনি বারবার স্থাপন করেছেন।

আর তার সিগনেচার শট — বিরল ব্যাকফুট পাঞ্চ বা ফাইন লেট কাট — এখনকার ক্রিকেটে বিরল প্রতিভার নিদর্শন।

ক্যাপ্টেন্সির চাপের পরও ধারাবাহিকতা অটুট

অনেক ক্রিকেটার অধিনায়কত্বের চাপ সামলাতে না পেরে ফর্ম হারান। কিন্তু রুট এর ব্যতিক্রম।
ইংল্যান্ড টেস্ট দলের অধিনায়ক থাকা অবস্থায়ও তিনি ধারাবাহিক সেঞ্চুরি করে গেছেন। এমনকি অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরও তার ফর্ম অপরিবর্তিত।

এ থেকেই বোঝা যায় — তার খেলা শুধুমাত্র দায়িত্ব নয়, বরং নেশা।

 

আধিপত্যের ব্যাখ্যা: রান নয়, স্থিতিশীলতা

আজকের দিনে যেখানে ব্যাটাররা ফর্ম হারিয়ে বছরে ২০০-৩০০ রানে সীমাবদ্ধ থাকেন, সেখানে রুট বছরের পর বছর ১০০০+ রান করে যাচ্ছেন।
এটাই তার “আধিপত্য” এর মূল ব্যাখ্যা — স্থিতিশীলতা, ধারাবাহিকতা ও দলের জন্য অবদান।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে রুটই একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি ৬০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন। এটি ছিল তার ৬৯তম ডব্লিউটিসি ম্যাচ। এ তালিকায় তার পরেই আছেন স্টিভ স্মিথ, মার্নাস লাবুশেন, বেন স্টোকস ও ট্রাভিস হেড। ইংলিশ ব্যাটারের এই রানে রয়েছে ২০টি সেঞ্চুরি ও ২২টি হাফসেঞ্চুরি, যেখানে তার গড় ৫২-এরও বেশি।

শুধু এই মাইলফলকই নয়, চলমান ভারত সিরিজে আরও কিছু ব্যক্তিগত অর্জন ছুঁয়েছেন রুট। ম্যানচেস্টার টেস্টে রাহুল দ্রাবিড়, জ্যাক ক্যালিস ও রিকি পন্টিংকে ছাড়িয়ে টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন তিনি। এছাড়া কুমার সাঙ্গাকারার ৩৮টি সেঞ্চুরির পাশে নিজের নাম বসিয়ে হয়েছেন যৌথভাবে চতুর্থ সর্বোচ্চ টেস্ট সেঞ্চুরি করা ব্যাটার।

জো রুটের টেস্ট ধারাবাহিকতা ও আধিপত্য আধুনিক ক্রিকেটে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
তিনি শুধুমাত্র একজন রান সংগ্রাহক নন, বরং টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহ্য রক্ষা করা একজন যোদ্ধা।

যেখানে টি-টোয়েন্টির ঝড়ো আবহে ধৈর্যের সংকট দেখা দেয়, সেখানে রুট হলেন ধৈর্য, কৌশল ও ধারাবাহিকতার শেষ আশ্রয়।
তিনি শুধু ইংল্যান্ডের নয়, পুরো ক্রিকেটবিশ্বের জন্য এক অনুপ্রেরণা — এক জীবন্ত কিংবদন্তি।
Related News

Popular News

error: Content is protected !!