স্নাতক শেষ করে মোহাম্মদ মাহাদী মাসনাদ উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
দেশে থাকা ফাঁকা সময়টা কাজে লাগাতে আর পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পড়াতেন পদার্থবিজ্ঞান। গতানুগতিক ছায়াশিক্ষার চেয়ে অনেক বেশি আন্তরিকতা আর সুষ্ঠু শিক্ষা দানের চেষ্টা করেছেন।
তাই শিক্ষার্থীদের সাথে তার দূরত্বও ছিলো অনেক কম। তাই তো, যখন উচ্চ শিক্ষা অর্জনে শেষ পর্যন্ত কানাডা চলেও গেলেন, তারপরও লকডাউনের সময়ে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য, বিশেষ করে রাজশাহী বা তার আশেপাশের মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ থেকে কানাডাতে বসেও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করে শুরু করলেন ফান্ড রেইজিং ক্যাম্পেইন।
শিক্ষার্থীরাও সাড়া দিলো, উৎসাহের সাথে। ততদিনে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, ‘ছোট’ থেকে ‘বড়’ হয়ে গেছে তারা। দেশের এই দুরবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর ধুঁকে ধুঁকে চলার কষ্ট লাঘবে কিছু একটা করার দায়িত্ব তো এখন তাদের।
শুরু হলো, “জড়তা”র পথচলা।
গতবছর এই সময়টাতে যখন পৃথিবীর অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশও লকডাউনের মতো “নেসেসারি ইভিল” এ স্থবির হয়ে আছে, ঠিক তখনই একদল সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণদের উদ্যোগে তৈরি হয় এই সংগঠন। প্রথমদিকে সংগঠনের নাম কী হবে, তা নিয়ে মতভেদ। হুট করে মির্জা মাহির ফাইয়াজ প্রস্তাব দিলো, “জড়তা” নামটা কেমন হয়?” অন্যরা তাতে সমর্থন দিয়ে বললো, “হ্যা, তাইতো।লকডাউনে অসহায় গরীব মানুষদের জীবনযাত্রা একদম স্থবির হয়ে পড়েছে, আমরা তাদেরকে সহায়তা দিয়ে তাদের জীবনটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।
এটা তো পদার্থের জড়তা ধর্মের সাথে মিলে যায়। তাহলে আমাদের সংগঠনের নাম হোক জড়তা।” সেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। এবার ফান্ড কালেকশনের পালা। লকডাউনে যেহেতু সব বন্ধ, তাই অনলাইনেই চালানো হলো, প্রচার প্রচারণা। ফেসবুকে পেজ খোলা, পাশাপাশি কর্মীদের সবার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা, শেয়ার করা, যতভাবে আরও বেশি মানুষের কাছে ডোনেশনের আবেদন পৌছানো যায়। সংগঠন কর্মীরা নিজেরাও নিজেদের সাধ্যমতো যে যা পারলো, তাদের বাবা মায়েরাও নিজেদের সাধ্যমতো সাহায্য করতে শুরু করলো। ছোট পরিসরে সবকিছু চলছে, স্থানীয়ভাবে। কিন্তু ক্রমাগত চেষ্টার ফলে আস্তে আস্তে ছোটো পরিসরে সাহায্য করার পরিকল্পনাটাই বড় হতে লাগলো।
জড়তা ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কর্মী ফজলে রাব্বি স্পন্দন ও মির্জা মাহির ফাইয়াজের সাথে কথা বলে জানা যায়, শেষ পর্যন্ত তারা প্রায় দেড় লাখ টাকার কাছাকাছি, অর্থ তুলতে পেরেছিলেন। যা খরচ করা হয়েছে, প্রায় দেড়শ পরিবারের জন্য লকডাউন শেষ হওয়া পর্যন্ত চলার মতো নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের যোগান দিতে।
যাতে তাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বেরোতে না হয়। অনেক পরিবারকে সরাসরি আর্থিক সাহায্যও করা হয়েছে। রমজান মাস চলে আসায়, “জড়তা” ফাউন্ডেশন যাকাত গ্রহণ কার্যক্রমও শুরু করে। যাকাতের টাকা আলাদা ভাবে শুধু বিশেষ অভাবগ্রস্ত মানুষদের পেছনেই যে খরচ করা যাবে, সেই দিকেও তারা যথেষ্ট খেয়াল রাখে।
গত বছরের মতো এবছরও লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষদের দুরাবস্থা কিছুটা হলেও লাঘব করার চেষ্টায় “জড়তা” ফাউন্ডেশনের কর্মীরা আবারও শুরু করেছেন, তাদের ফান্ড রেইজিং কার্যক্রম। গতবছরের কাজের সাফল্যে তারা অনেক অনুপ্রাণিত আর আশা করছেন, এবছর তারা আরও বেশি পরিবারের কাছে নিজেদের সেবা পৌছাতে সক্ষম হবেন।
ঘরে বসেই যাতে মানুষ তাদের কার্যক্রমের অংশ হতে পারে, সেজন্য বিকাশ, রকেট, নগদ ৩ মাধ্যমেই তারা অর্থ সংগ্রহ করছেন। বা কেউ যদি অর্থ দিতে না পারে, বরং তার নিজেরই অর্থসাহায্য দরকার হয় বা অভাবী পরিবারের খোঁজ জানা থাকে, তাকেও যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করছেন তারা। বিশেষ করে, রাজশাহী শহর বা তার আশেপাশে এমন অভাবী বা লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোই তাদের লক্ষ্য।
জড়তা ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সরাসরি দেখতে ভিজিট করতে পারেন, তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/JorotaRajshahi)।
“জড়তা” ফাউন্ডেশনে ডোনেশনের মাধ্যমে তাদের এই সামাজিক সেবা কার্যক্রমের অংশ হতে পারেন পাঠকও। ডোনেশনের জন্য টাকা পাঠানো যাবে যে নম্বরগুলোতে
বিকাশ : 01737239039
রকেট : 017372390394
নগদ : 01737239039
মহেশখালী ট্রিবিউনকে ধন্যবাদ ‘জড়তা’-র কথা তুলে ধরায়।
“জড়তা” সংগঠন এর পক্ষ থেকে মহেশখালী ট্রিবিউন কে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের এই উদ্যোগে উৎসাহ ও প্রচারণায় সহযোগিতা প্রদানের জন্য
“জড়তা” সংগঠনের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ “মহেশখালী ট্রিবিউন” কে উৎসাহ ও প্রচারণার মাধ্যমে সহযোগিতার জন্য