এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন কাঠমিস্ত্রীর কাজ করা মোস্তাকিম আলী।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় ‘বি’ ইউনিটের গ্রুপ-৩-এ ৮০ দশমিক ৩০ নম্বর পেয়ে প্রথম হন তিনি।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাঁধাইড় মিশনপাড়া এলাকার শামায়ুন আলীর ছেলে মোস্তাকিম আলি। তার বাবা পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর বাবার সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।
তার মা জোসনা বেগম গৃহিণী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় মোস্তাকিম। অভাবের সংসারে মেজ ভাই আজিজুল হককে পড়াতে পারেননি বাবা। বাল্যকাল থেকেই তিনি বাবার সাথে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। ছোট বোন ফাহিমা খাতুন মুণ্ডুমালা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তবু অনেক কষ্টে দুই ছেলে-মেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন কাঠমিস্ত্রী বাবা।
কোনো ভর্তি কোচিং বা স্পেশাল প্রাইভেট পড়েনে। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের সহযোগিতায় এতদূর এসেছেন। অনলাইনে কিছু ভর্তি প্রস্তুতির লেকচার অনুশীলন করে নিজেকে তৈরি করেছেন মোস্তাকিম আলী।
মোস্তাকিম এখনো কাঠমিস্ত্রির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ভর্তি পরীক্ষার ১৫ দিন আগে কাজে বিরতি দেন। ১১ অক্টোবর মধ্যরাতে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই আনন্দের বন্যা বইছে তার পরিবারে।
মোস্তাকিম উপজেলার মুন্ডুমালা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে জেএসসি পাস করেন। একই স্কুল থেকে ২০১৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেন। জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও এসএসসিতে গিয়ে পান জিপিএ-৪ দশমিক ৫৫।
তানোরের ফজর আলী মোল্লা ডিগ্রি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন মোস্তাকিম। ২০২০ সালে জিপিএ-৪ দশমিক ৮৩ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদিনা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। কিন্তু আশা ছাড়েননি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। শেষে এইচএসসিতে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেন। পাস করে এবার বসেন রাবির ভর্তি পরীক্ষায়।
রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করে গণমাধ্যমকর্মীদের বলে, দীর্ঘদিন ধরে বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেছি। দিনে কাজ করলেও রাতে পড়ালেখা করতাম। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ১৫ দিন আগে কাজে বিরতি দিয়েছি। আজ কষ্টের ফল পেলাম। নিজেকে করপোরেট চাকরির উপযোগী করে গড়ে তুলতে চায় তিনি। পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রের উন্নয়নে অবদান রাখতে চান মোস্তাকিম।
ছেলের সফলতায় উচ্ছ্বসিত তার বাবা শামায়ুন আলীও। তিনি বলেন, পড়ালেখার প্রতি ছোটবেলা থেকেই মোস্তাকিমের আগ্রহ ছিল। কষ্ট হলেও তার পড়ালেখা বন্ধ করেনি। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে নিজেকে এগিয়ে নিতে। স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরাও তার প্রতি বেশ আন্তরিক ছিলেন। তাদের সঠিক দিকনির্দেশনায় লেখাপড়া করায় এমন সাফল্য পেয়েছে মোস্তাকিম। তার সাফল্যে আমি গর্বিত। তাই সবার কাছে দোয়া চাই।
ফজর আলী মোল্লা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জয়নুল আবেদিন জানান, কলেজে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষকরা নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান করেছেন। তাই তো এ ফলাফল করা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা এটা ধরে রাখতে চাই। কলেজের পড়াশোনার মান উন্নয়নে আমরা কাজ করছি।