ইউরোপে রপ্তানি শুরু হয়েছে মহেশখালীর মিষ্টি পান এর। এ রপ্তানির মধ্যে দিয়ে ভাগ্য বদল হতে যাচ্ছে লাখো পান চাষীর।
দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর মহেশখালীসহ সারাদেশের পান রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে পানের বন্ধ বাজার খুলে দিয়েছে ইউরোপ। দীর্ঘ ছয় বছর আট মাস পর বাংলাদেশের পান আবারও বৈধভাবে রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে।
ঢাকার শ্যামপুর বিসিক শিল্পনগরের সেন্ট্রাল হাউসে ইউরোপে পুণঃ পান রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক।
এরপরই প্রায় এক টন পান ইউরোপে রপ্তানির মধ্যে দিয়ে হারানো পানের বাজার ফিরে পাচ্ছে পান চাষি সহ রপ্তানিকারকরা।
এদিকে দেশের এই সংকটময় মুহুর্তে মহেশখালীর মিষ্টি পান সহ দেশের পানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে মহেশখালীর চাষি ও খুচরা রপ্তানিকারকদের মাঝে।
পান চাষি ও রপ্তানিকারকরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক এমপি সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে কক্সবাজার জেলায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে মহেশখালীতে ১৭শ’ হেক্টর এবং চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, সদর, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ১৮শ’ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। পাহাড়ি জমিতে যে পান চাষ হয় তার হিসাব কৃষি বিভাগে নেই।
তবে একটি সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ে অন্তত ২ হাজার হেক্টরেরও অধিক জমিতে পান চাষ হয়। এছাড়া পাহাড়ি এলাকায় একবার পানের চাষ করলে প্রায় দুই বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
মহেশখালীর মিষ্টি পান চাষিদের ভাগ্য বদলঃ
সমতল জমিতে ফলন পাওয়া যায় প্রায় নয় মাস। সমতল জমিতে পানের চাষ শুরু হয় অক্টোবরে, শেষ হয় জুন মাসে। আর পাহাড়ি এলাকায় পানের চাষ যেকোনো সময় অথবা বর্ষা মৌসুমে বেশি করা যায়।
দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবসহ সামাজিক রীতি, বিয়ে-শাদিতে মিষ্টি পানের খ্যাতির পাশাপাশি প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
কক্সবাজার জেলার মহেশখালী মিষ্টি পান এর জন্য বিখ্যাত। জেলায় ঐতিহ্যবাহী এই মিষ্টি পানের ব্যবসার উপর নির্ভর করে ৭টি উপজেলার প্রায় ৪০ হাজার পরিবার। পানচাষিদের দাবি, রপ্তানি বৃদ্ধি হলে পান উৎপাদন আরও বাড়বে।
অধিকন্তু, এখানকার পানের সুনাম দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকাতেও ছড়িয়ে রয়েছে। কারও কারও মতে আফ্রিকা মহাদেশের কিছু কিছু দেশও বাদ যায় না। সমগ্র বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ মিষ্টি পান মহেশখালী দ্বীপে উৎপাদিত হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশি পানে ক্ষতিকর স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) র্যাপিড অ্যালার্ট সিস্টেম ফর ফুড অ্যান্ড ফিড (আরএএসএফএফ) ২০১৪ সালের ২৯ জুলাই বাংলাদেশি পান আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপ।
প্রথমে এক বছর নিষিদ্ধ করলেও পরে সময় আরো বাড়ানো হয়। ২৭ মে (বুধবার) পুনরায় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেলো বাংলাদেশ।
বিখ্যাত মহেশখালীর মিষ্টি পান নিয়ে রচিত গান – যদি একখান সুন্দর মুখ পাইতাম, মহেশখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম। শ্যাফালী ঘোষ এর যদি সুন্দর একটি মুখ পাইতাম, মহেশখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম গানের লিরিক্স সহ এটি এই অঞ্চলে মইশখাইল্যা গান নামেও সমধিক পরিচিত।