ব্রোকলি চাষ পদ্ধতি ও পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা
ব্রোকলি চাষ পদ্ধতি অন্যান্য চাষাবাদের তুলনায় অনেক সহজ। ব্রোকলি দেখতে ফুলকপির মত, তবে রংটা সবুজ। এর বর্ণ সবুজ বলে অনেকে এর নাম দিয়েছে সবুজ ফুলকপি। চাইনিজ খাবারের ব্যবহৃত অন্যতম প্রধান উপকরণ এই সবজি। বাংলাদেশে অধিকাংশ লোকের কাছে ব্রোকলি কলি এখনও পরিচিত নয়। আসুন যেনে নেওয়া যাক ব্রোকলি চাষ পদ্ধতি ও পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা সম্পর্কে-
জলবায়ু ও মাটিঃ
সাধারনত যে ধরনের জলবায়ুতে ফুলকপি চাষ হয় সেখানে ব্রোকলিও ভালো জন্মে। তবে ব্রোকলির পরিবেশিক উপযোগীতার সীমা একটু বেশি বিস্তৃত। পানি জমে না এই রূপ উঁচু জমি, উর্বর দোআঁশ মাটি হলে ফলন ভালো পাওয়া যায়।ব্রোকলির গাছ ১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালো জন্মে। ব্রোকলি এপ্রিল মাসের পরেও ভালো ফলন দিতে পারে। দেশের সব অঞ্চলেই ব্রোকলি চাষ করা যেতে পারে।সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এমন জমি ব্রোকলি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
ব্রোকলির উল্লেখযোগ্য জাতঃ
ব্রোকলির কিছু উল্লেখযোগ্য জাত গুলো হচ্ছে- প্রিমিয়াম ক্রপ, গ্রিন কমেট, ডিসিক্কো, টপার-৪৩, ডান্ডি, সপ্রডিটিং টেক্সস ১০৭, গ্রিন ডিউক, ক্রুসেডার, ওয়ালথাম ২৯, গ্রিন মাউন্টেইল, ইতালিয়ান গ্রিন, গ্রিন বাড ইত্যাদি। সবগুলো জাতই বিদেশ থেকে আমদানি করা। বর্তমানে আমাদের দেশে জাপান থেকে বেশ কিছু জাতের ব্রোকলির বীজ আসছে ও বাজারে বিক্রি হচ্ছে।বাংলাদেশের আবহাওয়া ব্রোকলির বীজ উৎপাদনের উপযুক্ত নয় বলে প্রতি বছরই বীজ আমদানি করতে হয়।
চারা তৈরির নিয়মাবলিঃ
পাতা পচা সার বা গোবর সার ১ ভাগ, বালু ১ ভাগ ও মাটি ২ ভাগ মিশিয়ে ব্রোকলির বীজতলা তৈরি করতে হয়। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত ব্রোকলির চারা রোপন করা যায়। কম বয়সে চারা দ্রুত বাড়ে সেপ্টেম্বর মাসে যখন বৃষ্টি কমে আসে তখন উঁচু জমি দেখে বীজতলা তৈরি করা যায়। বীজতলায় ১ মিটার চওড়া করে বেড তৈরি করতে হবে। বেডের মাটি ভালো করে কুপিয়ে ঘাস আগাছা পরিষ্কার করে প্রতি বর্গ মিটারে ৪-৫ কেজি গোবর মাটির সাথে মিশিয়ে বেড সমান করে কয়েকদিন রেখে দিতে হবে।
“ আগাম মৌসুমে বৃষ্টি হলে বীজতলায় পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির সময় চারাকে রক্ষা করতে হবে।চারা রোপনের সময় হিসাব করে চারার জন্য বীজতলায় ২৫০-৪০০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে। মনে রাখবেন মাস খানেকের কম বয়সী চারা লাগানো ভালো। লক্ষ্য রাখতে হবে কখনও যেন বীজতলা একেবারে শুকিয়ে না যায় আবার পানিও যাতে জমে না থাকে। চারা তোলার পূর্বে বীজতলায় সেচ দিতে হবে।তাহলে চারার গোঁড়া নরম হয়ে আসে এবং বীজ তুলতে সহজ হয়। “
জমি তৈরি ও চারা রোপনঃ
ব্রোকলি ঠান্ডা আবহাওয়ার ফলন বলে বাংলাদেশে শুধু রবি মৌসুমের চাষ হয়। ব্রোকলির চাষ অবিকল ফুলকপির মতোই।সারাদিন রোদ পায় এমন জমি ব্রোকলি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। লাঙ্গল বা টিলার দিয়ে মাটি কয়েক দিন রোদে ফেলে রাখতে হবে। সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য বেডে চারা রোপন করাই ভালো। সেচ দেয়া এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা অত্যন্ত জরুরি চাষ দেয়ার সময় শতকে ২৫-৪০ কেজি পচা গোবর বা খামারজাত সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।মাটির সব ঘাস, শিকড়, আগাছা, আবর্জনা পরিষ্কার করে ঢেলে ভেঙেফেলে সমান করতে হবে। চারা লাগানোর পর চারার গোড়ায় অবশ্যই পানি দিতে হবে। চারা রোপনের পূর্বে গোড়ার দিকে দু-একটি বড় পাতা কেটে বাদ দিলে চারা কম মরবে। চারার মাথা থেকে নতুন পাতা ছাড়া শুরু হলেই বুঝতে হবে চারা মাটিতে লেগে গেছে এবং নতুন শিকড় ছেড়ে মাটি থেকে খাবার ও পানি গ্রহণ শুরু করেছে।
সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনাঃ
ব্রোকলির জন্য অন্যান্য সার খুবই উপকারী। ইউরিয়া সারের পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে ফলনও বাড়ে। জমি তৈরির সময় ও পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পরিমানে জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি হেক্টরে গোবর ১৫ হাজার কেজি,ইউরিয়া ২৫০ কেজি, এমওপি ২০০কেজি, টিএসপি ১৫০ কেজি এবং প্রতি চারায় পচা খৈল ৫০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হয়।জৈব সারের সাথে ইউরিয়া সার চারা রোপণের ১৫ দিন পর দুই কিস্তিতে সমান ভাগ করে দিতে হবে।
সেচ ও পানি নিষ্কাশনঃ
সার দেওয়ার পরপরই সেচ দিতে হবে। জমি শুকনো দেখলে সেচ দিতে হবে।
আগাছা দমন ও নিড়ানিঃ
সার দেওয়ার ঠিক আগে আগাছা নিড়ানো ভালো এতে সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশতে পারে এবং সারের অপচয় কম হয়।গাছের পাতা পরিপূর্ণ ভাবে ছড়ানোর পূর্ব পর্যন্ত জমি অবশ্যই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। তবে মনে রাখবেন ব্রোকলি একটি অগভীরমূলী ফসল। তাই গাছের কাছাকাছি মাটি ৫সে.মি. এর বেশি গভীর করে নিড়ানো যাবে না। যদি বেড বা জমির মাটি শক্ত হয়ে চটা বেঁধে যায় তবে অবশ্যই নিড়ানি বা কোদাল দিয়ে তা ভেঙে দিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগ দমনঃ
ব্রোকলি চাষের সময় জমিতে পোকার আক্রমণ হতে পারে। পোকা দমনের জন্য স্থায়ী ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। আমাদের দেশের ব্রোকলির সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল মাথাখেকো লেদা পোকা। এ ছাড়াও আর ও অন্যান্য পোকার মধ্যে রয়েছে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, বিছা পোকা,ঘোড়া পোকা ইত্যাদি। এছাড়াও ব্রোকলির বিভিন্ন ধরনের রোগের মধ্যে আছে পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ধ্বসা,গদাই মূল, মোজাইক ইত্যাদি রোগ দারা আক্রমণ হয়ে থাকে।
পুষ্টি গুণাগুণঃ
চমৎকার এই সবজিটি এখন বাংলাদেশেই চাষ হচ্ছে এবং এটি দেশের চাইনিজ রেস্টুরেন্ট গুলোর চাহিদা মিটিয়ে এটি এখন দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে। পুষ্টির দিক দিয়েও ব্রোকলি অনেক সমৃদ্দ।এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন সি এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। নিয়মিত ব্রোকলি খেলে তারুন্যতা বৃদ্ধি পায়।
আয়েশা আক্তার-
ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার (ষষ্ঠ পর্ব)
এগ্রিকালচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট,
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
আমার অন্যান্য কৃষি বিষয়ক পোস্ট গুলো পড়তে নিচের লিংক গুলো তে ক্লিক করুন-
[…] বা মিষ্টি মরিচ একটি জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এর […]
[…] ব্রোকলি চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা […]