দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুতুবজোম লাল মোঃ সিকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদের মাঝে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনা অবশেষে উচ্ছৃঙ্খল যুবক কর্তৃক জনসমক্ষে ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ১৫ জুন ২০২১ ইংরেজি তারিখে কুতুবজোম তাজিয়া কাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তি ‘নগদ’ নিয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার রেশ ধরে মহেশখালী উপজেলার অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাল মোঃ সিকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যন্য শিক্ষকদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক (অফ্সোর হাই স্কুলের অফিস সহকারি মোঃ সরোয়ার আলম ও মোঃ সোহেল নামে এক বখাটে) কতিপয় অভিভাবকসহ বিদ্যালয়ে গিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন কারণ ছাড়াই পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক বিদ্যালয়ে জোরপূর্বক প্রবেশ করে অহেতুক শিক্ষকদের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। প্রধান শিক্ষক বারবার এতো লোক একসাথে না এসে জনপ্রতি এসে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা উত্থাপন করার জন্য অনুরোধ করেন, কিন্তু তারা কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে (বিদ্যালয়ের দপ্তরীর সাথে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে) উদ্দ্যেশ্য করে তর্কাতর্কি করতে থাকে।
ঘটনার পরপরই প্রধান শিক্ষক শামীমা আখতার শামিম বিষয়টি খতিয়ে দেখে জানতে পারেন, এদের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ নেই উপবৃত্তি বিষয়ে। ‘নগদ’ নিয়ে যা ঝামেলা তার চিত্র সারা বাংলাদেশেই একই।
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রধান শিক্ষক শামিমা আখতার শামিম গত ০৬/০৬/২০২১ খ্রি.তারিখ থেকে ১৩/০৬/২০২১ খ্রি.তারিখ পর্যন্ত “গণিত অলিম্পিয়াড মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ” এ কক্সবাজার জেলা সদরে অবস্থিত প্রাইমারি টিচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) তে ছিলেন।
এর পরদিনই ১৪ জুন তিনি বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী ও সহকারি শিক্ষকদের এলাকাবাসীর বাকবিতন্ডার বিষয়টি শোনে কক্সবাজার থেকে সরাসরি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টায় উপযুক্ত প্রমাণ সহ কারণ জানতে চান। আগত অভিভাবক সহ উশৃংখল বখাটেরা প্রধান শিক্ষককে উপযুক্ত প্রমাণ সহ অভিযোগের ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি।
এরপর দিন ১৫ জুন আবারও নতুন করে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক অফিস সহকারীর সাথে বাকবিতন্ডার রেশ ধরে আবার শিক্ষকদের সাথে তর্কাতর্কিকে জড়িয়ে পড়েন।
এ পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করে মহেশখালী শিক্ষা অফিসকে বিষয় টি অবগত করেন।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহ্ফুজুর রহমান ও মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আব্দুল হাই এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিষয়টিতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কর্মকর্তাকে তৎক্ষণাৎ বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে ঘটনার বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হন।
পরে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও উপজেলা শিক্ষা অফিস ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে পূণরাবৃত্তি না হয় সেই বিষয় টি মাথায় রেখে উচ্ছৃঙ্খল, ষড়যন্ত্রকারী যুবকদের শাস্তিস্বরূপ গত ১৭ জুন, ২০২১ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধি সহ অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ষড়যন্ত্রকারীরা (জনসমক্ষে) প্রধান শিক্ষকসহ সকল সহকারি শিক্ষকদের নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করে এবং ভবিষ্যতে আর কোনদিন এরকম ভিত্তিহীন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত না থাকার বিষয়ে অঙ্গীকারনামা দেন।
এতে উৎসুক জনতার ভীড় ছিল লক্ষ্য করার মতো। তাছাড়াও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির অংশ হিসেবে উপস্থিত সকল অভিভাবক শিক্ষকদের নিকট নিজেদের ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। এসময় উশৃংখল বখাটেরা তাদের শাস্তিস্বরূপ অভিভাবক সহ উপস্থিত সকলের জন্য দুপুরের নাস্তার ব্যবস্হা করেন।
ষড়যন্ত্রকারীদের এমন জনসম্মুখে ক্ষমা প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে স্বচ্ছতার জয় নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়ে প্রধান শিক্ষক শামীমা আখতার শামীম বলেন, ” আমাদের বিদ্যালয়টি পড়ালেখা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সহ স্বচ্ছতার দিক থেকে মহেশখালী উপজেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ৭ বছরেরও অধিক সময় এই বিদ্যালয়কে নিজের পরিবারের মতো আগলে রেখেছি। এরকম কোন অহেতুক ঘটনা সংঘটিত হবার কোন সুযোগ তার দায়িত্ব পালনকালে ঘটেনি বা ঘটার সম্ভাবনাও নেই মর্মে এহেন জঘন্য ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান প্রধান শিক্ষক।
তিনি আক্ষেপের সাথে জানান, ‘নগদ’ এর বিষয়ে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষকদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অথচ শিক্ষকরা বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবেও লকডাউন উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন যা খুবই বিরল শিক্ষা বিভাগে। তার মতো বাংলাদেশের সকল শিক্ষক যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন সে আহবান জানান তিনি।
তিনি ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ন্যায় বিচার পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহ্ফুজুর রহমানের মতো অগ্রগামী মানুষ, প্রতিটি থানায় মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আব্দুল হাই মতো স্বচ্ছ, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের মতো আন্তরিক হলে কোন অন্যায় শিক্ষকদের সাথে বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ঘটানোর সুযোগ পাবেনা উচ্ছৃঙ্খল মানুষ।এজন্য তিনি উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।