অনলাইন ডেস্কঃ
চট্টগ্রাম নগরের এক সময়ের ছাত্র শিবিরের ক্যাডার মোয়াজ্জেম মোর্শেদ কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা জুড়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
ছাত্র জীবনের শুরু থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মীর ওপর হামলা ও অপহরণ ঘটনায় মোয়াজ্জেম জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই মোয়াজ্জেম এখন কক্সবাজারের রামুতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা সমালোচনা।
গত ১২ (অক্টোবর) মঙ্গলবার ঢাকায় কক্সবাজারের তিন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের জন্য ২১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়।
সেখানে রামুর রশিদনগর ইউনিয়ন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মোয়াজ্জেম মোর্শেদের নাম আছে। আগামী ১১ নভেম্বর এসব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মোয়াজ্জেম মোর্শেদ রামু উপজেলার রশিদনগর গ্রামের মঞ্জুর মোর্শেদের ছেলে। তিনি ২০১৭ সালে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে ভর্তি হন। এরপর তিনি কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসাইনকে খালাতো ভাই পরিচয় দিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ আছে।
ছাত্রলীগ নেতা এস এম সাদ্দাম হোসাইন বলেন, মোয়াজ্জেম মোর্শেদ তাঁর খালাতো ভাই নন। তাঁর পাশের ইউনিয়নের ছেলে। তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর মোর্শেদ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। মোর্শেদ অতীতে কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। বরং তিনি শিবিরের ক্যাডার হিসেবে বিভিন্ন সময়ে অপকর্ম করেছেন। এমন প্রমাণ পাওয়ার পর তাঁকে ছাত্রলীগের সব কর্মকাণ্ডে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম বলেন, মোয়াজ্জেম মোর্শেদ চট্টগ্রামের ভয়ংকর এক আতঙ্কের নাম। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ও মহানগরে শিবিরের ক্যাডার ছিলেন। তাঁর হাতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির লোকজন মার খেয়েছেন। তাঁর অত্যাচারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজেও যেত পারতেন না। এই মোয়াজ্জেম মোর্শেদের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মাহমুদুল করিমকে অপহরণ করে টর্চার সেলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। সে সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মোয়াজ্জেম মোর্শেদসহ তিনজন শিবির ক্যাডারকে আটক করেছিল। পরে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেন শিবির ক্যাডার মোয়াজ্জেম।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে তিনি ২০১০ সালে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। সে সময় মোয়াজ্জেম মোর্শেদ চট্টগ্রাম কলেজ শিবিরের অন্যতম নীতিনির্ধারক ও ক্যাডার ছিলেন। কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলে মোয়াজ্জেম তাঁকে কয়েক দফা হুমকি দেন। কিন্তু কথা না মানায় মোয়াজ্জেম প্রথমে ২০১১ সালের জুলাইতে তাঁর ওপর হামলা করেন এবং তুলে নিয়ে তাঁর পা ভেঙে দেন। পরে ব্যাপক মারধর করে তাঁর মা–বাবাকেও হত্যার হুমকি দেন মোয়াজ্জেম। এই ক্যাডারের কারণে ঠিকমতো কলেজে যেতে পারেননি।
মাহমুদুল করিম বলেন, ২০১৩ সালে ২৯ অক্টোবর পরীক্ষা দিতে গেলে তাঁকে (মাহমুদুল) তুলে নিয়ে যান মোয়াজ্জেম মোর্শেদ ও তাঁর দলবল। প্রথমে তাঁরা তাঁকে নির্মাণাধীন স্টাফ ভবনে নিয়ে মারধর করেন। তখনকার পরিত্যক্ত সোহরাওয়ার্দী হোস্টেলে নিয়ে আঙুলের নখ তুলে তাঁকে গুরুতর জখম করে ফেলে রাখেন। পরে পুলিশ এসে পুরো হোস্টেল ঘেরাও করে তাঁকে উদ্ধার করে।
মাহমুদুল করিম আরও বলেন, এই শিবির ক্যাডার কীভাবে রামুর রশিদনগর ইউনিয়নের নৌকা প্রতীক পান, আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পান, তা ভাবনার বিষয়। কারা এই শিবির ক্যাডারকে দলের মনোনয়ন পেয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন, তা–ও খতিয়ে দেখা উচিত।
মোয়াজ্জেম মোর্শেদ নৌকার মনোনয়ন পাওয়া কে কেন্দ্র করে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই লিখেন, ‘রামুর রশিদনগর ইউনিয়নের নৌকার মাঝি মোয়াজ্জেম মোর্শেদ চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল হককে হত্যাচেষ্টার উৎসবে মেতেছিল। আজ সে নৌকার মাঝি কেমনে হলো? ধিক্কার জানাই যারা তাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছে তাদের। চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হোস্টেলে থাকা শিবিরের ক্যাডার যদি নৌকার মাঝি হয়, এটা আওয়ামী লীগের জন্য অশনিসংকেত নয়কি?’
অভিযোগের বিষয়ে মোয়াজ্জেম মোর্শেদ বলেন, ‘২০১০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বের হয়েছি। তার আগে-পরে কী হয়েছে, সেসব মনে নেই।’
ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল করিমের ওপর হামলা ও নির্যাতনের বিষয়ে মোয়াজ্জেম বলেন, এই নামে তিনি কাউকে চেনেন না। একটি মহল তাঁর জয় ঠেকাতে তাঁকে শিবির ক্যাডার বানিয়ে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালাচ্ছে।
রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া বলেন, তিনি দীর্ঘদিন রামুতে ছাত্রলীগ করেছেন। এখন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু মোয়াজ্জেম মোর্শেদ নৌকা প্রতীক পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি তাঁকে চিনতেন না।
তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো।