ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কের হাতে এখন যে ট্রফিটি তুলে দেওয়া হয় তা ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি নামে পরিচিত৷ কিন্তু আগে ফুটবলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে এই ট্রফি দেওয়া হত না, দেওয়া হতো অন্য এক ট্রফি৷ সেই ট্রফির নাম হল জুলে রিমে৷ ১৯৩০ সাল থেকে শুরু হয় বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা৷
তখন থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিজয়ী দলকে জুলে রিমে ট্রফি প্রদান করা হয়েছে। জনসাধারণের কাছে প্রথমে তা শুধু বিশ্বকাপ বা Coupe du Monde নামেই বেশি পরিচিত ছিল৷ ১৯৪৬ সালের পর থেকে সেটির জুলে রিমে নামকরণ হয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজনকারী ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমের কথা মাথায় রেখে৷
সেই সময় ঠিক করা হয়েছিল যে দেশ তিনবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হবে সেই দেশকে চিরদিনের জন্য দিয়ে দেওয়া হবে জুলে রিমে কাপটি৷ ১৯৭০ সালে ব্রাজিল তৃতীয় বারের মত বিশ্বকাপ জিতলে তাদেরকে স্থায়ীভাবে ট্রফিটি দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৮৩ সালে ট্রফিটি চুরি হয়ে যায়৷ তদন্তে নেমে চার ব্যক্তিকে দায়ী করে তাদের জেরা করা হয়েছিল৷ কিন্তু ট্রফিটি আর পাওয়া যায়নি। প্রায় নিশ্চিতভাবেই মনে করা হয় চোর ট্রফিটিকে গলিয়ে ফেলেছে।
তবে এর আগেও ট্রফিটি চুরি হয়েছিলো৷ শোনা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ট্রফিটি ছিল ১৯৩৮ বিশ্বকাপ জয়ী ইতালির কাছে। নাজিদের হাত থকে ট্রফিটিকে রক্ষা করতে ফিফার সহ-সভাপতি ও এফআইজিসি-এর সভাপতি ইতালির অধিবাসী অট্টোরিনো বারাসি খুব সন্তর্পনে এটিকে ব্যাংক থেকে তুলে রোমে নিয়ে যান এবং একটি জুতার বাক্সের ভেতরে ভরে তাঁর নিজের বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখেন। আবার ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের চার মাস আগে ওয়েস্টমিনিস্টার সেন্ট্রাল হলে আয়োজিত একটি উম্মুক্ত প্রদর্শনী থেকে ট্রফিটি চুরি হয়ে যায়। তবে তার সাতদিন পর খবরের কাগজে মোড়ানো অবস্থায় ওই ট্রফিটি পিকেল্স নামক একটি কুকুর দক্ষিণ লন্ডনের আপার নরউড অঞ্চলের শহরতলীর বাগানের পার্শ্বস্থ এলাকা থেকে উদ্ধার করে।
১৯৭০ সালের পর অর্থাৎ ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ থেকে চ্যাম্পিয়নকে আরেকটি নতুন ট্রফি দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু হয়৷ সেই নতুন ট্রফিটি ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি নামে পরিচিত৷ সাতটি মহাদেশ থেকে আগত বিশেষজ্ঞরা ফিফাকে ৫৩টি মডেলের নকশা দেখিয়েছিল। শেষপর্যন্ত ইতালিয় নকশাকার সিলভিও গাজ্জানিগার তৈরীকৃত নমুনা বিশ্বকাপ ট্রফি হিসেবে গৃহীত হয়। এ নতুন ট্রফিটির উচ্চতা ৩৬ সেন্টিমিটার, ১৮-ক্যারট সোনা দিয়ে তৈরি আর ওজন ৬,১৭৫ গ্রাম। এর ভিত্তি দু’স্তরের মূল্যবান ম্যালাকাইট দিয়ে তৈরী। ভিত্তির নিচের দিকে ১৯৭৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত সকল বিশ্বকাপজয়ীর নাম খোদাই করা আছে। তবে যা অবস্থা তাতে ২০৩৮ সালের পর নতুন বিজয়ী দলের নাম লেখার মত আর জায়গা থাকবে না। তখন এ ট্রফিটি হয়তো বাদ দেওয়া হবে।
এই নতুন ট্রফি বিজয়ী দেশকে স্থায়ীভাবে আর দেওয়া হয় না, তা তারা যতবারই জিতুক না কেন। প্রথা অনুসারে বিশ্বকাপ জয়ী দল পরবর্তী বিশ্বকাপ পর্যন্ত ট্রফিটি তাদের কাছে রাখতে পারে। এরপরে তাদেরকে সোনার প্রলেপ দেয়া নকল বিশ্বকাপ দেওয়া হয়।
রাকিব
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়