ইশরাত মুহাম্মদ শাহ জাহানঃ
বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবের সাথে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর ঘরে ঘরে বাড়ছে জ্বর, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা।
এসব উপসর্গ দেখা দিলেও হাসপাতালে না গিয়ে অনেকে গোপন রেখে পল্লী চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে ওষুধ সেবন করে যাচ্ছেন।
হোম কোয়ারেন্টিন ও বাড়ি লকডাউন পরিস্থিতি এড়াতে করোনা আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করতে চান না অনেকে।এতে করোনা সংক্রমণ বহুগুণে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে জ্বর, সর্দি ও কাশির প্রকোপ। সব বয়সি মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত অনেক রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পল্লী চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে উপজেলার হাটবাজারের ফার্মেসিগুলোতে প্যারাসিটামল, নাপা ও এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।
জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি অনেকে গোপন রেখে পল্লী চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে ওষুধ সেবন করছেন। হোম কোয়ারেন্টিন ও বাড়ি লকডাউন পরিস্থিতি এড়াতে করোনা আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করতে চান না তারা।
মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডাক্তার মোঃ মাহ্ফুজুল হক জানান, সময়টা ভালো যাচ্ছে না। তাই যারা জ্বরসহ সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা উচিত। অস্বাভাবিকভাবে ঘরে ঘরে বাড়ছে জ্বর, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের বহির্বিভাগে আগের চেয়ে তূলনামূলক বেশি জ্বরে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
সারা দেশে যখন সর্বাত্মক লকডাউন তখন এসব উপসর্গ দেখা দেওয়া ও দিন দিন রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জ্বরে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীরই করোনা পরীক্ষা ও হাসপাতালে যেতে অনীহা। আর যারা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন তারাও আবার করোনা পরীক্ষা করতে খুব একটা আগ্রহী নন। এ উপজেলার প্রতিটি গ্রামে এমন ঘর কমই আছে যে ঘরে জ্বরে আক্রান্ত রোগী নেই। আক্রান্তরা গ্রামের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে তা সেবন করছেন।
করোনা শনাক্ত হলে সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে করোনা পরীক্ষা কিংবা হাসপাতালে যাচ্ছেন না অনেকে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকরা রোগীদের করোনা পরীক্ষা করার কথা বললেও তাদের অধিকাংশই নানা অজুহাতে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষা রেপিড এন্টিজেন ও জিন এক্সপার্ট সহজলভ্য হলেও আতঙ্কে আগ্রহ নেই করোনা পরীক্ষায়। এতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
প্রতিদিনই গ্রামের চিকিৎসকদের কাছে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, অধিকাংশ জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ করোনার উপসর্গ বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পল্লী চিকিৎসক জানান।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের পল্লী চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের কাছে প্রতিদিন ৮০ শতাংশ রোগী আসছে, যাদের করোনা উপসর্গ- জ্বর, কাশি, সর্দি, গলাব্যাথার। এছাড়াও প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী মুঠোফোনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আবহাওয়া ও ভাইরাসজনিত কারণে জ্বর, সর্দি ও কাশির রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। রোগীরা করোনা আতঙ্কে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন না। তবে অনেক রোগী মুঠোফোনে চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে টানা ভারি বর্ষণে উপজেলায় হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। উপজেলার প্রায় ঘরে ঘরেই এখন এ ধরনের রোগী। তাঁদের মধ্যে জ্বর নিয়ে ভীতি থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ নেই।
তাপমাত্রার এ তারতম্যের কারণেই সর্দি-জ্বর বেড়ে গেছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তবে করোনা মহামারির এই সময়ে যে কারণেই সর্দি-কাশি-জ্বর দেখা দিক না কেন, অবহেলা না করে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন উপজেলার বেশির ভাগ বাড়িতেই কেউ না কেউ জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত। তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ কিনে সেবন করছেন। এভাবে ইতিমধ্যে অনেকে সুস্থ হয়েও উঠছেন। আবার কেউ কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে গিয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসব রোগীর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত। ওষুধে ভালো হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এ ছাড়া অনেক রোগীরই উচ্চ তাপমাত্রা, অর্থাৎ ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর উঠে যাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ ওষুধে তিন থেকে চার দিনে তাঁরা সুস্থ হয়ে উঠছেন।
বড় মহেশখালী নতুন বাজার ফার্মাসিতে ঔষধ কিনতে আসা এক ভদ্রলোকের সাথে কথা হয়, তিনি জানান- তিন দিন আগে তাঁর জ্বর আসে। এতে বাজারের একটি ফার্মেসিতে গিয়ে উপসর্গের কথা বলে অ্যান্টিবায়োটিক, প্যারাসিটামলসহ আরও কয়েকটি ওষুধ কিনে খেয়েছেন। এখন আর জ্বর নেই। তবে শরীর খুব দুর্বল।
এদিকে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর বেশির ভাগ রোগীই মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়ছেন। দুর্বল শরীরে জ্বর নিয়েও অনেকে বাজারঘাটসহ জনসমাগমের এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টিকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসক সহ সাধারণ জণগণ।
বড় মহেশখালী নতুন বাজারের চার থেকে পাঁচটি ওষুধের দোকানের বিক্রেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়। তাঁরা জানান, সর্দি-কাশি-জ্বরের ওষুধ বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। যা অবস্থা, তাতে মনে হয় এখন ঘরে ঘরে জ্বর। এ ধরনের বেশির ভাগ রোগী বা রোগীর স্বজন চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে তাঁদের কাছে এসে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন।
সামাজিক বিড়ম্বনাসহ নমুনা পরীক্ষায় জটিলতা ও আস্থাহীনতার কারণে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত তেমন কেউ করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা মনে করছেন, করোনা হোক আর সাধারণ জ্বর হোক, তা সাধারণ চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যাবে। এ ছাড়া এর আগে নমুনা দেওয়ার পর অনেকেই ৮ থেকে ১০ দিন বা তারও বেশি সময় পর পজিটিভ রিপোর্ট পেয়েছেন। কিন্তু তত দিনে তাঁরা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করলেও পজিটিভ হওয়ার কারণে পরিবারসহ লকডাউনে যেতে হয় তাঁদের। তাঁদের কেউ কেউ সামাজিক হেনস্তার শিকারও হন। এ কারণে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগেরই করোনা পরীক্ষায় নেই আগ্রহ।
মহেশখালী পৌর এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, ছয়-সাত দিন ধরে তিনিসহ তাঁর পরিবারের সবারই জ্বর-কাশি চলছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবনে কিছুটা উন্নতি হলেও পুরোপুরি সুস্থ হননি কেউ। এ অবস্থায় ঝামেলা ও বিড়ম্বনার ভয়ে করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তাঁরা।