কৃষি ডেস্কঃ
আজ ৮ অক্টোবর, বিশ্ব ডিম দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্সেস অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ডিম দিবস পালিত হচ্ছে।
ডিম দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য– ‘প্রতিদিন ডিম খাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই’।
১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক এগ কমিশনের কনফারেন্সে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ডিম দিবসের উদ্দেশ্যঃ উদ্দেশ্য হলো ডিমের খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা এবং স্বাস্থ্যসম্মত ডিম উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ভোক্তার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ডিম অন্তর্ভুক্তি উৎসাহিত করা।
বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদনঃ
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে সারাবিশ্বে যেখানে ডিমের উৎপাদন ছিল ৬১.৭ মিলিয়ন টন সেখানে ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭৬.৭ মিলিয়ন টন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মাত্র এক দশকের ব্যবধানে ডিমের উৎপাদন প্রায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫৭৪.২৪ কোটি এবং ২০১৯-২০ সালে এ পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭৩৬ কোটিতে। অর্থাৎ গত দশ বছরে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। জনপ্রতি বছরে ১০৪ টি ডিম হারে বর্তমানে জনপ্রতি প্রাপ্যতা ১০৪.২৩টি। বাংলাদেশ ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২০৩০ বাস্তবায়নে জনপ্রতি দুধ, মাংস ও ডিম যথাক্রমে ২৭০মিলি, ১৫০গ্রাম এবং ১৬৫টি বছরে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) বাস্তবায়নের মাধ্যমে রূপকল্প-২০৪১ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে জনপ্রতি দুধ, মাংস ও ডিম যথাক্রমে ৩০০মিলি, ১৬০গ্রাম এবং ২০৮টি বছরে ধরা হয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিম উৎপাদনের একটি প্রাক্কলন করেছে।
সে হিসাব অনুযায়ী ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ডিমের বার্ষিক উৎপাদন হবে প্রায় ৩২৯৩.৪ কোটি এবং ২০৪১ সাল নাগাদ ৪৬৪৮.৮ কোটি।
ডিমের পুষ্টিগুণঃ বর্তমানে দেশে অসংখ্য বাণিজ্যিক লেয়ার খামার, ককরেল খামার, প্যারেন্ট স্টক ও গ্রান্ড প্যারেন্টস্টক খামার, হ্যাচারী, ফিড মিল ইত্যাদি গড়ে উঠেছে। পোল্ট্রি শিল্পের উৎপাদিত মূল পণ্য ডিমের বাজার নিশ্চিতকরণের জন্য সচেতন ভোক্তাশ্রেণি প্রয়োজন। ডিম এমন একটি প্রাকৃতিক খাদ্য যা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিগুণে ভরপুর।
* একটি সম্পূর্ণ ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম মানসম্মত প্রোটিন, ৫ গ্রাম উন্নত ফ্যাটি এসিড, ৭০-৭৭ কিলোক্যালরি শক্তি, ১০০-১৪০ মিলিগ্রাম কোলিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপকরণ থাকে।
* ডিমের প্রোটিনে রয়েছে মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সকল অ্যামাইনো এসিড যা দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধনে সহায়ক।
* ডিমের ফ্যাটি এসিডে এলডিএলের চেয়ে এইচডিএল এর অনুপাত বেশি। ফলে নিয়মিত ডিম খেলে রক্তে এইচডিএলের অনুপাত বাড়ে যা রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের উপস্থিতি হ্রাস করতে সহায়ক।
* স্কাভেঞ্জিং পদ্ধতিতে পালিত মুরগির ডিমে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বেশি থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
* ডিমের কোলিন মস্তিস্ক কোষ গঠন ও সিগন্যালিং সিস্টেমে কাজ করে মানুষের স্মরণশক্তিকে বাড়িয়ে দেয়।
* এছাড়াও ডিমে লিউটিন ও জেক্সানথিন রয়েছে যা চোখের দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে।